ভিতরে

গোপালগঞ্জে সাড়া ফেলে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড় মামা-ভাগ্নে

॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ১০ জুন,২০২৩ : সম্পর্কে মামা-ভাগ্নে। মামা স্বাভাবে রাগী আর দুষ্টু হলেও ভাগ্নে একদম শান্ত আর কোমল। তবে এ সম্পর্ক মানুষের না বলা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের দু’টি ষাঁড়ের কথা। এবারের ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার বান্ধাবাড়ী গ্রামের সবুজ গোলদার তার নিজ বাড়িতে অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড় দু’টি বিক্রির জন্য পস্তুত  করেছেন। মামার ওজন ১ হাজার ৪০ কেজি আর ভাগ্নের ওজন ৯৬০ কেজি। এরই মধ্যে মামা ও ভাগ্নের দাম উঠেছে প্রায় ১৬ লাখ টাকা। তবে ১৯ লাখ হলে বিক্রির আশা করছের ষাঁড় দু’টির মালিক। এ ষাঁড় দু’টিকে দেখতে প্রতিদিনই তার বাড়িতে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা।
প্রায় সাড়ে ৩ বছর আগে সবুজ গোলদারের নিজের পালিত দু’টি গাভী থেকে জন্ম নেয় অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের এ ষাঁড় দু’টি। এরপরই এদের নাম দেয়া হয় মামা-ভাগ্নে। পরম যতেœ ষাঁড় দু’টিকে পালন করে আসছে ষাঁড়ের মালিক সবুজ গোলদার, তার ছেলে সৌরভ গোলদারসহ পুরো পরিবার। মামা দুষ্টু প্রকৃতির হলে ভাগ্নে যেন কোমল আর শান্ত।প্রায় সাত ফুট লম্বা ও ছয় ফুট উচ্চতার ১ হাজার ৪০ কেজি ওজনের কালো রঙের ষাঁড়টির নাম রাখা হয়েছে মামা। আর সাত ফুট লম্বা ও সাড়ে পাঁচ ফুট উচ্চতার ৯৬০ কেজি ওজনের কালো লালচে রঙের শান্ত প্রকৃতির ষাঁড়টির নাম রাখা হয়েছে ভাগ্নে।
কোন প্রকার ওষুধ ছাড়াই খড়, ঘাস, দেশীয় খাবার খাইয়ে এবারের ঈদের জন্য ষাঁড় দু’টিকে পস্তুত করেছেন তিনি। কোনো ধরনের মেডিসিন ছাড়াই প্রকৃতিক খাবার খাইয়ে করা হয়েছে পেশী বহুল শরীর। প্রতি বেলায় চার কেজি দানাদার খাবার, দুই আটি ঘাস ও খড় খায় ষাঁড় দুটি। প্রতিদিন প্রতিটি ষাঁড়ের খাবার খরচ প্রায় ৭০০ টাকা।
এরই মধ্যে মামার দাম ৯ লাখ টাকা ও ভাগ্নের দাম ৭ লাখ টাকা হলেও বিক্রি করেননি তিনি। মামার দাম ১০ লাখ ও ভাগ্নের দাম ৯ লাখ টাকা হলে বিক্রি করবেন বলে জানিয়েছেন ষাঁড়ের মালিক সবুজ গোলদার।
শুধু সবুজ গোলদার নয় পরম স্নেহে নিজ সন্তানের নের মত ষাঁড় দু’টিকে লালন-পালন করেছেন সবুজ গোলাদারের পরিবার। যাঁড় দু’টিকে বিক্রি করতে কষ্ট হলেও এ যাঁড় বিক্রির টাকা দিয়ে অর্র্থিক সংকট ঘোঁচাতে চান তারা।
এখন পর্যন্ত  জেলায় এর থেকে বড় ষাঁড়ের খবর পাওয়া যায়নি। তাই প্রতিদিনই এতো বড় ষাঁড় দেখতে সবুজ গোলদারের বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন উৎসুক জনতা। আর এতো বড় ষাঁড় দেখে খুশি তারা সেই সাথে দূর দূরান্ত  থেকে আসছেন ক্রেতারা।
পাশের গ্রাম থেকে ষাঁড় দেখতে আসা রানা ফকির বলেন, সবুজ গোলদার দু’টি বড় ষাঁড় তৈরি করেছেন শুনে দেখতে এসেছি। এখন পর্যন্ত জেলায় এর থেকে বড় ষাঁড় দেখতে পাইনি। দেখে আমার খুবই ভালো লেগেছে। আমি আমার মোবাইলে ছবি তুলে রেখেছি। সবাইকে দেখাবো বলে।
বান্ধাবাড়ী গ্রামের জাহিদ শেখ বলেন, চার-পাঁচ গ্রামের মধ্যে এত বড় ষাঁড় নেই। আমাদের গ্রামের এ ষাঁড় দু’টি হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। এ ষাঁড় দু’টি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসে। অনেকেই দাম বলে আর অনেকেই দেখে ফিরে যায়।
ষাঁড়ের মালিক সবুজ গোলদারের ছেলে সৌরভ গোলদার বলেন, ওদের জন্মের পর থেকেই আমি ওদের মাঠে নিয়ে গিয়ে ঘাস খাইছি, খেলা করেছি। সাড়ে তিন বছর ধরে ষাঁড় দু’টিকে আমি দেখভাল করছি। ওদের সাথে এতটাই বন্ধুত্বপূর্ণ  সম্পর্ক হয়েছে যে ওদের পিঠে উঠলেও ওরা আমাকে কিছু বলে না। কুরবানিতে বিক্রি করলে সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগবে আমার। কারণ ওদের সঙ্গে থাকতে থাকতে একটা মায়া হয়ে গেছে।
ষাঁড়ের মালিক সবুজ গোলদারের স্ত্রী বলেন, আমি তাদের একদম নিজের সন্তানের মত লালন করেছি। নিজের সন্ত দের সাথে ওদের খিচুড়ি রান্না করে খাইয়েছি। বিক্রি করায় খারাপ লাগলেও আমাদের কিছুই করা নেই।
ষাঁড় দু’টির মালিক সবুজ গোলদার বলেন, আমার পালন করা দু’টি গাভী থেকে এ ষাঁড় দু’টির জন্ম হয়েছে। এরপর থেকে আমার পুরো পরিবার ষাঁড় দু’টির দেখাশোনা করে। ছোট থাকতেই প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে এতো বড় করছি। এদের গোসল করাতে আমার ৮ থেকে ১০ জন লোকের প্রয়োজন হয। তবে আমার ছেলে থাকলে ও একাই করতে পারে। আমার ছেলের সাথে এদের বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। এর আগের ঈদে মামা ও ভাগ্নের দাম উঠেছিল ১৫ লাখ টাকা কিন্তু আমি বিক্রি করিনি। ১৯ লাখ টাকা দাম পেলে কোরবানিতে বিক্রি করবো।
ষাঁড় দু’টিকে বিক্রি করলে কষ্ট হবে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিজের সন্তানের মত লালন পালন করেছি কষ্ট তো হবেই। কিন্তু আর্থিক অনাটনের কারণে বিক্রি করতে হবে।
গোপালগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোবিন্দ চন্দ্র সরদার বলেন, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কোটালীপাড়া উপজেলার বান্ধাবাড়ী গ্রামের সবুজ গোলদার দু’টি ষাঁড় পস্তুত করেছেন। এর মধ্যে একটার ওজন ২৬ মণ আর একটার ওজন ২৪ মণ। প্রাণিসম্পদ অফিসের পরামর্শে ষাঁড় দু’টিকে একদম প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে বড় করা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে তাদের সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে। সাড়াফেলে দেয়া এ ষাঁড় দু’টি বিক্রি করে তাদের আর্থিক সংকট কেটে লাভবান হবে বলে মনে করছি।

আপনি কি মনে করেন?

0 টি পয়েন্ট
উপনোট ডাউনভোট

একটি মন্তব্য

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস গ্যাস ক্ষেত্রের ২৪ নম্বর কূপ থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু

নাটোরে চুরি হওয়া নবজাতকে কুষ্টিয়া থেকে উদ্ধার