ভিতরে

যশোরে আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজের ৫শ’ শয্যার হাসপাতাল উদ্বোধন

যশোরে আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজের ৫শ’ শয্যার হাসপাতাল  আজ উদ্বোধন করা হয়েছে।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের কথা চিন্তা করে যশোর শহরতলীর পুলেরহাটে নির্মিত হয়েছে আদ্-দ্বীন সকিনা  মেডিকেল কলেজের ৫শ’ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল। নবনির্মিত ১১ তলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক এই হাসপাতালটির আজ  উদ্বোধন করা হয়েছে।
সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আদ্-দ্বীন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুস সবুর।
যাত্রা শুরু উপলক্ষে আজ ১১ মার্চ  থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ৪০ দিনব্যাপি বিনামূল্যে এক্সিডেন্ট এন্ড ইমার্জেন্সি, সার্জারি, অর্থোপেডিক্স, চক্ষু, নাক-কান-গলা, ইউরোলজি,  মেডিসিন, ডায়াবেটিস, মনোরোগ, চর্ম, গর্ভকালীন ও গর্ভোত্তর, গাইনি, শিশু ও ফিজিওথেরাপি বিভাগে চিকিৎসা  সেবা প্রদান করা হবে।
সাধারণ মানুষের স্বল্পমূল্যে জটিল রোগের চিকিৎসা  সেবা প্রদানের জন্য উন্নত  দেশের আদলে এই হাসপাতালটি গড়ে  তোলা হয়েছে। বিশাল এই হাসপাতালে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে এয়ার এ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্ডিয়াক রোগীদের জরুরি চিকিৎসা  সেবা প্রদান ব্যবস্থা। একই স্থানে সব ধরনের  রোগীদের চিকিৎসা  সেবা প্রদানের স্বপ্ন নিয়ে হাসপাতালটি নির্মাণ করেছেন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা.  শেখ মহিউদ্দিন। তিনি হাসপাতালটি নির্মাণে তার সৃষ্টিশীল  মেধা, মনন ও আধুনিক, সময়োপযোগী চিন্তা  চেতনার সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন। হাসপাতালটি নির্মাণে জাপান, জার্মান, তুর্কি, চায়না ও ভারতসহ বিভিন্ন  দেশ  থেকে অত্যাধুনিক  মেডিকেল সরঞ্জাম আমদানি করা হয়েছে। 
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে,বিশেষায়িত এই হাসপাতালের প্রতিটি  ফ্লোরের আয়তন প্রায় ১৭ হাজার বর্গফুট। জরুরি বিভাগে ২৪ ঘণ্টা সব ধরনের রোগীর চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে।
যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশেই গড়ে উঠেছে মনোমুগ্ধকর পরিবেশে এবং একাডেমিক ও নান্দনিক ইনটেরিয়ার ডিজাইনে সাজানো এই সু-সজ্জিত স্বাস্থ্য  কেন্দ্রটি। বহির্বিভাগ এবং আন্তঃবিভাগের  রোগীরা ৫টি লিফট ব্যবহার করে ওপর তলায় যাতায়াত করতে পারবেন। 
এছাড়া ইমারজেন্সি এবং অসুস্থ  রোগীদের ওপর তলায় ওঠা-নামার জন্য রয়েছে র‌্যাম্প বা ঢালু সিঁড়ি। ইমারজেন্সি এক্সিটের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে সাধারণ সিঁড়ি। রাখা হয়েছে অগ্নি-নির্বাপন ব্যবস্থা।
নিচতলাতেই রয়েছে বৃহৎ এক্সিডেন্ট এন্ড ইমারজেন্সি বিভাগ।  যেখানে দুর্ঘটনায় আহত অথবা অন্য  যেকোনো  রোগে আক্রান্তদের জরুরি চিকিৎসা সেবা  দেয়ার জন্য ওটি এবং ১০টি অত্যাধুনিক  বেড স্থাপন করা হয়েছে। পাশেই রয়েছে ২৪ ঘণ্টা মায়ের  ছোয়া ক্যাফেটেরিয়ায় স্বল্পমূল্যে সব ধরনের স্বাস্থ্য সম্মত খাবার এবং নাস্তা প্রাপ্তির সুবিধা। এখানে স্থাপন করা হয়েছে এয়ার এ্যাম্বুলেন্স কাউন্টার
এই হাসপাতালের প্রথম তলায় স্থাপন করা হয়েছে বিজনেস ক্যাশ কাউন্টার এবং ২৪ ঘণ্টা ফার্মেসি। ডান পাশেই গর্ভবতী মায়েদের জন্য চেকআপ কেন্দ্র। সহজলভ্যতার জন্য তার পাশেই রাখা হয়েছে আল্ট্রাসনোগ্রাফি বিভাগ। একই তলায় পশ্চিম পাশে স্থাপিত হয়েছে বৃহৎ শিশু বহির্বিভাগ ওপিডি।  যেটা ইনডোর শিশু পার্কের আদলে সাজানো হয়েছে। চিকিৎসা সেবা গ্রহণের সাথে বিনোদনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পাবে শিশু  রোগীরা। হাসপাতালে শিশু  রোগীদের জন্য এই ধারণাটি সম্পূর্ণ নতুন এবং ব্যতিক্রমি উদ্যোগ। শিশু বহির্বিভাগের সাথেই রয়েছে টিকাদান কেন্দ্র।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, প্রথমতলার পূর্বপাশে রয়েছে প্রশাসনিক বিভাগ। যেখানে হাসপাতালের পরিচালক, ম্যানেজার, ইমারজেন্সি ম্যানেজার, সুপারভাইজার এবং হিসাব বিভাগের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন।
দ্বিতীয়তলায় পূর্ব পাশে নির্মাণ করা হয়েছে ফিজিওথেরাপি ক্লিনিক। মহিলা এবং পুরুষের জন্য আলাদাভাবে সাজানো হয়েছে এই বিভাগটি। এই তলায় রয়েছে ডায়াবেটিক বহির্বিভাগ, ইএনটি, অর্থপেডিক্স, চর্ম ও মনোরোগ বিভাগ।
তৃতীয়তলায় পূর্বপাশে বৃহৎ চক্ষু আউটডোর। রোগীদের সুবিধার জন্য তৃতীয় তলায় আরেকটি বিজনেস কাউন্টার ও ওপিডি ম্যানেজার বিভাগ রাখা হয়েছে। পাশেই রয়েছে  মেডিসিন ও সার্জারী বহির্বিভাগ, ব্লাড ব্যাংক, প্যাথলজি, এক্স-রে ও ইসিজি রুম।
চতুর্র্থতলা থেকে শুরু হয়েছে ইনডোরে ভর্তি  রোগীদের  সেবা কার্যক্রম। পূর্বপাশে আনোয়ারা ফিটাল  মেডিসিন ওয়ার্ড, এরপর প্রসূতি মায়েদের জন্য নাসিমা ওয়ার্ড। এই তলায় ২টি  লেবার রুমে ৫৪টি  বেড এবং পাশেই ১টি ওটি।  পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড। পশ্চিম পাশে রয়েছে ১৩ শয্যার আইসিইউ বিভাগ। চতুর্র্থতলা  থেকে শুরু করে প্রতিটি তলায় একটি করে কাউন্সিলিং রুম রাখা হয়েছে।
পঞ্চম তলায় পূর্ব পাশে ইমারজেন্সিসহ ২৮শয্যার এনআইসিইউ। কিডনী কেয়ার ইউনিট, মহিলা এবং পুরুষ  রোগীদের ৪৩ শয্যার কিডনী ডায়ালাইসিস এবং  মেডিসিন ওয়ার্ড। ৬ষ্ঠ তলা  থেকে অষ্টম তলা পর্যন্ত প্রচলিত আইসিইউ  থেকেও উন্নত মানের প্রযুক্তি সমৃদ্ধ সর্বমোট ২৭ শয্যার এইচডিইউ  সেবা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
৬ষ্ঠ তলায় পূর্ব পাশে ২৩ শয্যার শিশু ওয়ার্ড স্থাপন করা হয়েছে। এখানে চক্ষু বিভাগে আলাদা মহিলা ও পুরুষ ওয়ার্ড রয়েছে। একই তলায় পশ্চিম পাশে স্থাপন করা হয়েছে এইচডিইউ। সপ্তমতলা পূর্ব পাশে ১৯ শয্যার মহিলা চক্ষু ওয়ার্ড। এই তলায় আরো রয়েছে সার্জারি, অর্থপেডিক্স এবং ইএনটি বিভাগের মহিলা ও পুরুষ ভর্তি রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড। অষ্টম তলায় ৮টি  জেনারেল অপারেশন থিয়েটার। পশ্চিম পাশে ২১ শয্যার  পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে ১৬  বেডের রিকভারি ওয়ার্ড। রয়েছে  পেসেন্ট ওয়েটিং লাউঞ্জ।
নবম তলায় রয়েছে উন্নত কার্ডিয়াক ওটি ও ক্যাথলাব। পাশেই রয়েছে ২১ শয্যার বিশিষ্ট কার্ডিয়াক ইমারজেন্সি বিভাগ।  যেখানে এয়ার এ্যাম্বুলেন্সযোগে আসা  রোগীরা জরুরি কার্ডিয়াক  সেবা পাবেন। এয়ার এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের জন্য ভবনের ১০ তলায় এবং রুফটপে নির্মাণ করা হয়েছে ২টি  হেলিপ্যাড। ১০টি এ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে সার্বক্ষনিক  রোগী যাতায়াত  সেবাও বাদ যায়নি। 
এছাড়া সব ধরনের গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। খুলনা বিভাগ এবং  গোপালগঞ্জ  জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ এয়ার এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের মাধ্যমে কার্ডিয়াক চিকিৎসাসহ অন্যান্য জরুরি চিকিৎসা  সেবা পাবেন।

আপনি কি মনে করেন?

0 টি পয়েন্ট
উপনোট ডাউনভোট

একটি মন্তব্য

৭ মার্চের ভাষণ দিয়ে বাঙালিত্বের আত্ম প্রকাশ হয়েছিল : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে ময়মনসিংহ পরিণত হয়েছিল উৎসবের নগরীতে