ভিতরে

রোমাঞ্চকর ম্যাচে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারিয়ে শেষ আটে সুইজারল্যান্ড

কিলিয়ান এমবাপ্পের পেনাল্টি মিসের খেসারত দিতে হলো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে। বুখারেস্টে অনুষ্ঠিত ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের শেষ ১৬‘র ম্যাচে গতকাল টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলে ফ্রান্সকে পরাজিত করে শেষ আট নিশ্চিত করেছে সুইজারল্যান্ড। নাটকীয়তায় ভরা ম্যাচটি নির্ধারিত সময়ের  ৩-৩ গোলে ড্র ছিল। 
৯০ মিনিটে মারিও গাভারানোভিচের গোলে দুই গোলে পিছিয়ে থেকেও সমতায় ফিরে সুইজারল্যান্ড। ফ্রান্সের হয়ে সর্বশেষ পেনাল্টিটি শটটি নিতে আসেন এমবাপ্পে। কিন্তু বিশ্বকাপ বিজয়ী এই তারকার শটটি রুখে দেন সুইস গোলরক্ষক ইয়ান সোমার। আর এতেই সুইসদের কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত হয়। শেষ আটে সুইজারল্যান্ডের প্রতিপক্ষ স্পেন। 
এর আগে ম্যাচ শুরুর ১৫ মিনিটের মধ্যে হ্যারিস সেফেরোভিচ সুইজারল্যান্ডকে এগিয়ে দিয়েছিলেন। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে রিকার্ডো রড্রিগুয়েজের শট দারুন দক্ষতায় রুখে দেন ফরাসি গোলরক্ষক হুগো লোরিস। সাড়ে পাঁচ বছরের অনুপস্থিতি শেষে ফ্রান্স দলে ডাক পাওয়া করিম বেনজেমা এরপর লেস ব্লুজদেও ত্রাতা হিসেবে দেখা দেন। দ্রুত দুই গোল করে তিনি ফ্রান্সকে লড়াইয়ে ফেরান। পল পগবার দুর্দান্ত কার্লিং শটে ফ্রান্স ৭৫ মিনিটে ৩-১ গোলে এগিয়ে যায়। সেফেরোভিচের দ্বিতীয় গোলের পর শেষ মিনিটে গাভরানোভিচের গোলে সমতায় ফিরে সুইজারল্যান্ড। ম্যাচটি গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ে কোন গোল না হওয়ায় ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারনের জন্য টাইব্রেকারের প্রয়োজন হয়। সুইজারল্যান্ড পেনাল্টিতে তাদের সবগুলো গোল করার পর সোমার এমবাপ্পের শটটি রুখে দিয়ে নায়ক বনে যান সুইস গোলরক্ষক। ৮৩ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম সুইসরা বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টের নক আউট পর্বে জয়ী হলো। 
আক্রমনভাগের তিন তারকা বেনজেমা, এমবাপ্পে ও আঁতোয়ান গ্রীজম্যানের কাছ থেকে সেরাটা বের করে আনার জন্য ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশ্যম যে ৩-৪-১-২ ফর্মেশনে কাল খেলতে নেমেছিলেন তা নিয়ে বিতর্ক থেকেই যায়। বিশেষ করে রক্ষনভাগের মূল দায়িত্বে থাকা ক্লেমেন্ট ল্যাঙ্গেলটের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। পুরো মৌসুম জুড়ে যেখানে তাকে নিয়ে বিতর্ক ছিল সেখানে জাতীয় দলেও তার থেকে বেশী কিছু আশা করা যায় কিনা তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। বাম দিক থেকে স্টিভেন জুবেরের ক্রসে ল্যাঙ্গেলেটের উপর দিয়ে হেড করে সহজেই সুইসদের এগিয়ে দেন সেফেরোভিচ। 
প্রথমার্ধে একবারও ফরাসি আক্রমনভাগ সোমারকে কোন পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি। দেশ্যম পরিস্থিতি বুঝতে পেরে রক্ষনভাগে তিনজনের পরিবর্তে ল্যাঙ্গেলেটের স্থানে কিংসলে কোম্যানকে নামিয়ে পরিচিত ৪-৪-২ ফর্মেশনে ফিরে যান। ৫৫ মিনিটে বামদিক থেকে ডি বক্সেও ভিতর ঢুকে পড়া জুবেরকে আটকাতে গিয়ে ফাউল করে বসে বেঞ্জামিন পাভার্ড। আর্জেন্টাইন রেফারি ফার্নান্দো রাপালিনি ভিএআর প্রযুক্তির সহায়তায় পেনাল্টির নির্দেশ দেন। কিন্তু রড্রিগুয়েজেকে আটকাতে লোরিস কোন ভুল করেননি। এনিয়ে পুরো টুর্নামেন্টে ১৫টি পেনাল্টির মধ্যে সাতটি মিস হবার ঘটনা ঘটলো। এরপর ম্যাচের পুরো চিত্রই বদলে দেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা বেনজেমা। গ্রুপ পর্বে পর্তুগালের সাথে ২-২ গোলের ড্রয়ের ম্যাচটিতেও তিনি দুই গোল করেছিলেন। এমবাপ্পের দারুন এক পাস থেকে ৫৭ মিনিটে তিনি ফ্রান্সের হয়ে সমতা ফেরান। এর দুই মিনিট পর গ্রীজম্যানের প্রচেষ্টা রুখতে গিয়ে সোমারকে শেষ মুহূর্তে মাথা ছুঁইয়ে পরাস্ত করেন বেনজেমা। ফলে ২-১ গোলে লিড পায় ফ্রান্স। ৭৫ মিনিটে ২৫ গজ দুর থেকে পগবার দুর্দান্ত শটে পুরো সুইস শিবির নিস্তব্ধ হয়ে যায়। কিন্তু বদলী খেলোয়াড় কেভিন এমবাবুর এসিস্টে সেভেরোভিচের গোলে ম্যাচ শেষের ৯ মিনিট আগে আশা টিকিয়ে রাখে সুইজারল্যান্ড। এরপর গাভরানোভিচের একটি গোল অফসাইডের কারনে বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু ম্যাচের নাটকীয়তা তখনো বাকি। শেষ মিনিটে গ্রানিত জাকার পাসে প্রিসনেল কিম্পেমবেকে পাশ কাটিয়ে জোড়ালো শটে গাভনারোভিচ লোরিসকে পরাস্ত করলে সমতায় ফিরে সুইজারল্যান্ড। ইনজুরি টাইমে কোম্যানের ফ্রি-কিক ক্রসবারের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। 
অতিরিক্ত সময়ের শুরুতেই পরিশ্রান্ত বেনজেমার স্থানে খেলতে নামেন অলিভার গিরুদ। সুইস রক্ষনভাগকে ফাঁকি দিয়ে পগবার বাড়ানো পাস থেকে পিএসজি ফরোয়ার্ড এমবাপ্পে সফল হতে পারেননি। গিরুদের হেড দারুনভাবে রক্ষা করেন সোমার। 
পেনাল্টি শ্যুট আউটে ফ্রান্সের হয়ে একে একে গোল করেছেন পগবা, গিরুদ, থুরাম, কিম্পেমবে। সুইসদের হয়ে বল জালে জড়িয়েছেন গাভরানোভিচ, শার, আকাঞ্জি, ভারগাস ও মেহমেদি। কিন্তু শেষ শটটি নিতে এসে পগবা আর পেরে উঠেননি। তার লো শট সহজেই রুখে দেন সোমার।

আপনি কি মনে করেন?

0 টি পয়েন্ট
উপনোট ডাউনভোট

একটি মন্তব্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি আগামি ১ জুলাই

আট গোলের নাটকীয়তায় ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে স্পেন