ভিতরে

বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী নীতির ফল ভোগ করছে : শিক্ষাবিদদের অভিমত

॥ মলয় কুমার দত্ত ও মহিউদ্দিন মাহী ॥
 ঢাকা, মার্চ ১৭, ২০২৩ (বাসস) : বাংলাদেশ এখন পররাষ্ট্রনীতি, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তিসহ সকল ক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর গৃহীত উন্নয়ন নীতি, পরিকল্পনা ও উদ্যোগের ফল ভোগ করছে বলে শিক্ষাবিদরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড.আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, ‘১৯৭৫ সালে যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়, তখন বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় ছিল দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি, চীন ও মালয়েশিয়ার চেয়েও বেশি, যা প্রমাণ করে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সেই অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার প্রতিটি পরিকল্পনা ও নীতি কতটা দক্ষতার সঙ্গে গ্রহণ করেছিলেন।’
বঙ্গবন্ধুর ১০৩ তম জন্মবার্ষিকীর প্রাক্কালে বাসস’র সঙ্গে আলাপকালে অধ্যাপক আরেফিন বলেন, অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে স্বল্প সময়ের মধ্যে মাথাপিছু আয় ওই পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া ছিল খুবই কঠিন কাজ।
তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে এভাবেই যদি রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন তাহলে দেশের অবস্থা কোথায় পৌঁছাতো ?
তিনি বলেন, নতুন জন্ম নেয়া যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশে দারিদ্র্যকে প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচনকে তাঁর প্রধান কাজ বলে মনে করেছিলেন।
অধ্যাপক আরেফিন বলেন,‘স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্যকে দেশের প্রধান শত্রু হিসেবে দেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন স্বাধীনতার ফল সবার কাছে পৌঁছে দিতে প্রথমেই দারিদ্র্য দূর করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য বাংলাদেশের পাশাপাশি সমগ্র বিশ্বে শান্তি বিরাজ করতে হবে। সমগ্র বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা ছাড়া দারিদ্র্য দূর করা যাবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আরেফিন বলেন, বঙ্গবন্ধু শান্তির সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী হওয়ায় তিনি তার পররাষ্ট্রনীতিতে ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এই নীতির প্রবর্তন করেছিলেন।
এই নীতি অনুসরণ করে, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে (ইউএনজিএ) ভাষণ দেন যেখানে তিনি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং মানবমুক্তি প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক উক্তি  ‘সকলের প্রতি বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বিদ্বেষ নয়’ – ‘শান্তির গ্যারান্টি হিসাবে আন্তর্জাতিক সংলাপ বছর, ২০২৩’ শিরোনামের ইউএনজিএ প্রস্তাবের ১৪ তম অনুচ্ছেদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
লেখক ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেন, বঙ্গবন্ধু তার সাড়ে তিন বছরের সরকারের আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব কর্পোরেশন ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বিপুল সংখ্যক আইন ও নীতি প্রণয়ন করে আজকের বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু তেল, গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা, নদী, ভূমি সীমানা ও পানি বণ্টন বিষয়েও উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
মুনতাসির মামুন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে একটি আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। একটি আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের জন্য তিনি সংবিধানে রাষ্ট্রের চারটি মূলনীতি-জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্র অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।’   
অনেক দেশে এ ধরনের নীতি নেই উল্লেখ করে বিশিষ্ট এ শিক্ষাবিদ বলেন, কমিউনিস্ট দেশগুলো ছাড়া অন্য কোনো দেশের রাষ্ট্রনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র নেই।
অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে রাষ্ট্রীয় নীতিতে এ ধরনের নীতিমালা অন্তর্ভুক্ত করায় আমেরিকাসহ বিভিন্ন পুঁজিবাদী দেশ ও কয়েকটি ইসলামিক দেশ তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে।
তিনি বলেন, কারণ এই দেশগুলো দুটি জিনিস – সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা পছন্দ করে না।  
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নতুন সংজ্ঞা দিয়েছেন। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র আমলাতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের সমান নয় এবং ধর্মনিরপেক্ষতা হল প্রত্যেকের নিজ নিজ ধর্ম পালনের সমান অধিকার এবং এতে রাষ্ট্র কোন হস্তক্ষেপ করবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আরও একটি কাজ করেছেন এবং অন্য কোনো রাজনীতিবিদ তা করার সাহস করতে পারেননি এবং তা হচ্ছে রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা ও সব ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা। কোনো দেশের অন্য কোনো রাষ্ট্রনায়ক তা করতে পারেননি।
ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর এস এম শামীম রেজা বলেন, শিক্ষা, কৃষি, শিল্প, সামাজিক সূচক এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে দেশের অবদানসহ সব খাতে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত অর্জিত উন্নয়ন ও অগ্রগতির ভিত্তি বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে রচিত হয়েছিল।
‘একটি দেশের উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করাই সবকিছু নয়, বরং তার আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে উন্নয়ন চিন্তাভাবনা তৈরি করা জরুরি বিষয়। স্বাধীনতাযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু প্রথম বাংলাদেশের উন্নয়নের এই চিন্তা নিয়ে এসেছিলেন।’
খুব অল্প সময়ের মধ্যে সংবিধান প্রণয়ন ছিল বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সেরা কাজ। কারণ একটি দেশের সংবিধান না থাকলে জবাবদিহিতার অভাব এবং অন্যান্য বিষয়ের কারণে সমগ্র শাসন ব্যবস্থায় অনেক সংকট তৈরি হয় যা শেষ পর্যন্ত সামগ্রিক উন্নয়ন প্রক্রিয়কে বাধাগ্রস্ত করে।
এই স্বল্প সময়ের মধ্যে, বঙ্গবন্ধু একটি জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠন করেন এবং তারপর তিনি প্রতিটি সেক্টরকে প্রাণবন্ত এবং জাতীয় পরিকল্পনার সাথে সংযুক্ত করতে কৃষি ও শিল্পসহ প্রতিটি সেক্টরের জন্য জাতীয় উন্নয়ন ও কর্মপরিকল্পনা  গ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু স্বল্পতম সময়ের মধ্যে, পুরানোটি পুনর্বিন্যাস করে একটি স্বাধীন দেশের উপযোগী দেশের প্রশাসনিক কাঠামো পুনর্গঠনের পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণেরও সূচনা করেছিলেন যা উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল।
বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে আককর্ষনীয়  উন্নয়ন উদ্যোগ ছিল জনকল্যাণমুখী উন্নয়ন পরিকল্পনার ধারণা যা এখনও উল্লেখযোগ্যভাবে প্রাসঙ্গিক এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) অন্যতম প্রধান বিষয়।
রেজা বলেন, ‘এখন, আমরা শিক্ষা খাত, প্রশাসন, জাতীয় উন্নয়ন, প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থা ও অন্যান্য উন্নত দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি উন্নয়নমূলক উদ্যোগের ফল ভোগ করছি’।
তিনি বলেন, ‘আমরা এই সত্যকে অস্বীকার করতে  এবং ভুলে যেতে পারি না যে আমাদের বর্তমান উন্নয়ন চিন্তাধারা ৫০ বছর আগে বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও উদ্যোগের দ্বারা শুরু হয়েছিল এবং অনুপ্রাণিত হয়েছিল’।

আপনি কি মনে করেন?

0 টি পয়েন্ট
উপনোট ডাউনভোট

একটি মন্তব্য

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ভারতীয় হাইকমিশনারের শ্রদ্ধা নিবেদন

বিএনপি ও তার মিত্ররা পেছনে টেনে না ধরলে দেশ আরও এগিয়ে যেতো : তথ্যমন্ত্রী