ভিতরে

লিটন-সাকিবের ব্যাটিং নৈপুন্যের পরও সান্ত্বনার জয় পেল না বাংলাদেশ 

হার দিয়ে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষ করলো বাংলাদেশ। 
লিটন দাস ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত ব্যাটিং নৈপুন্যের পরও বোলারদের ব্যর্থতায় আজ ক্রিদেশীয় সিরিজে নিজেদের চতুর্থ ও শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ৭ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। প্রথম তিন ম্যাচ হেরে ফাইনাল খেলার আশা আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিলো টাইগারদের। ফলে টুর্নামেন্টে ৪ ম্যাচ খেলে জয়হীনভাবে আসর শেষ করলো বাংলাদেশ। 
আর ৪টি করে ম্যাচ খেলে ৩টি করে জয়ে সমান ৬ পয়েন্ট করে পেয়ে ফাইনালের টিকিট পায় নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তান। রান রেটে এগিয়ে থাকায় টেবিলের শীর্ষস্থানে আছে  নিউজিল্যান্ড। আর দ্বিতীস্থানে পাকিস্তান। আগামীকাল টুর্নামেন্টের ফাইনালে লড়বে নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তান। 
ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে একাদশে দু’টি পরিবর্তন নিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে খেলতে নামে বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে খেলা মোসাদ্দেক হোসেন ও এবাদতের জায়গায় একাদশে সুযোগ পান তাসকিন আহমেদ ও হাসান মাহমুদ। 
টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেয় বাংলাদেশ। আবারও ওপেনিং স্লটে পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে গত ম্যাচে ইনিংস শুরু করেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন দাস। তিন নম্বরে নেমেছিলেন সৌম্য সরকার। এবার শান্তর সাথে ওপেনিংয়ে সৌম্য।
প্রথম ২ ওভারে চার-ছয় ছাড়া ৭ রান তুলেন শান্ত-সৌম্য। পেসার নাসিম শাহর করা তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে উইকেট ছেড়ে মারতে গিয়ে আকাশে বল তুলে দেন সৌম্য। মিড-অনে সহজ ক্যাচ নেন শাদাব। ৪ বলে ৪ রান করেন বিদায় নেন  গত ম্যাচে ১৭ বলে ২৩ রান করেছিলেন সৌম্য।
গত ম্যাচে ওপেনিংয়ে ১৬ বলে ২৩ রান করা লিটন, এবার তিন নম্বরে নামেন। চতুর্থ ও পঞ্চম ওভারে ২টি করে চার মারেন লিটন। পঞ্চম ওভারের শেষ বলে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান লিটন। 
মোহাম্মদ ওয়াসিমের করা পাওয়ার-প্লের শেষ ওভারের চতুর্থ বলটি লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে মিস টাইমিংয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ২টি চারে ১৫ বলে ১২ রান করা শান্ত। এবারও তার স্ট্রাইক রেট ১শর নীচে। 
পাওয়ার-প্লেতে ৪১ রান তুলতে গিয়ে দুই ওপেনারকে হারায় বাংলাদেশ। এরপর জুটি বাঁধেন লিটন ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। শান্তর আউট হবার পরের বলে নিশ্চিত রান আউটের হাত থেকে বাঁচেন লিটন। সাকিবের ডাকে সাড়া দিয়ে নন-স্ট্রাইক ছেড়ে দৌঁড় দিয়েছিলেন লিটন। পরে আবার ‘না’ করে দেন সাকিব। কিন্তু পাকিস্তানের ফিল্ডার শাদাবের ভুল থ্রোতে রান আউট হননি লিটন। 
পাকিস্তানের স্পিনার মোহাম্মদ নাওয়াজের করা অষ্টম ওভারে ১৭ রান তুলেন লিটন ও সাকিব। সাকিব ১টি করে চার-ছক্কা ও লিটন একটি বাউন্ডারি মারেন। তবে ১০ থেকে ১২তম ওভার পর্যন্ত চার-ছক্কার দেখা পাননি সাকিব ও লিটন।
দু’বার জীবন পেয়ে ইনিংসের ১২তম ওভারের দ্বিতীয় ও নিজের মুখোমুখি হওয়া ৩১তম বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সপ্তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান লিটন। ১৩তম ওভারের প্রথম বলে সাকিবের বাউন্ডারিতে বাংলাদেশের স্কোর ১শতে পা রাখে। 
১৪তম ওভারে নাসিমের বলে লিটন ছক্কা ও সাকিব চার-এ ১৪ রান পায় বাংলাদেশ। পরের ওভারের নাওয়াজের বলে সাকিব ছক্কা ও চতুর্থ ডেলিভারিতে চার মারেন লিটন। তাতে ১৪ দশমিক ৪ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর গিয়ে দাঁড়ায় ২ উইকেটে ১২৯ রান। সাকিব-লিটনের এই জুটি বাংলাদেশকে বড় সংগ্রহের পথ দেখায়। 
১৫তম ওভারের পঞ্চম বলে সাকিব-লিটন জুটি ভেঙ্গে পাকিস্তানকে প্রয়োজনীয় ব্রেক-থ্রু এনে দেন নাওয়াজ। স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে বল উঠে যায় আকাশে। ডিপ স্কয়ার লেগে সহজ ক্যাচ নেন ওয়াসিম। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস খেলে ৬৯ রানে থামেন লিটন। ৪২ বল খেলে ৬টি চার ও ২টি চার মারেন তিনি । তৃতীয় উইকেটে সাকিব-লিটন ৫৫ বলে ৮৮ রান যোগ করেন। 
লিটনের আউটের পর ১৭তম ওভারে টি-টোয়েন্টিতে ১২তম হাফ-সেঞ্চুরি করেন সাকিব। টানা দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরি পেতে ৩৪ বল খেলেছেন সাকিব। 
হাফ-সেঞ্চুরির পর ৩টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন সাকিব। ১৯তম ওভারের চতুর্থ বলে নাসিমের স্লোয়ার ডেলিভারিটি লেগ সাইড দিয়ে উড়িয়ে মারেন সাকিব। কিন্তু মিস টাইমিংয়ে ডিপ মিড উইকেটে শাদাবের ক্যাচে পরিণত হন সাকিব। ৭টি চার  ও ৩টি ছক্কায় ৪২ বলে ৬৮ রান করেন তিনি। আগের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৪ বলে ৮টি চার ও ১টি ছক্কায় ৭০ রান করেছিলেন সাকিব।
সাকিব ফেরার পর ওয়াসিমের শেষ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৩ রান পায় বাংলাদেশ। ওয়াসিমের বলে ১ রান করে ফিরেন ইয়াসির আলি। আর রান আউট হন ১০ বলে ১১ রান করা আফিফ। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৭৩ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। সংক্ষিপ্ত ভার্সনে এটা পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় দলীয় সংগ্রহ বাংলাদেশের। সর্বোচ্চ রান ৬ উইকেটে ১৭৫। ২০১২ সালের বিশ^কাপে পাল্লেকেলেতে ঐ স্কোর করেছিলো টাইগাররা।  
লিটন আউট হবার পর শেষ ৩১ বলে ৪৪ রান তুলতে পারে বাংলাদেশ। যেখানে ১৪ ওভার শেষে বড় সংগ্রহের পথ পেয়েছিলো টাইগাররা। বল হাতে পাকিস্তানের নাসিম-ওয়াসিম ২টি করে উইকেট নেন। 
১৭৬ রানের জবাবে উড়ন্ত শুরু করেন পাকিস্তানের দুই ইনফর্ম ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান ও অধিনায়ক বাবর আজম। ১২ দশমিক ৩ ওভারে ১০১ রান যোগ করেন তারা। পাওয়া-প্লেতে তোলেন ৪৬ রান।
১১তম ওভারে পাকিস্তানের জুটি ভাঙ্গার দারুন সুযোগ পেয়েছিলো বাংলাদেশ।  শরিফুলের করা ঐ ওভারের চতুর্থ বলটি ফ্লিক শটে ফাইন লেগ দিয়ে মারতে গিয়ে সাইফুদ্দিনকে ক্যাচ দেন রিজওয়ান। কিন্তু ক্যাচ ফেলেন সাইফ। তখন ৩২ রানে ছিলেন রিজওয়ান।
সাইফুদ্দিনের করা ১২তম ওভারের পঞ্চম বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ২৯তম ৩৭তম বলে অর্ধশতক পান বাবর। ঐ ওভারেই পাকিস্তানের রান ১শ স্পর্শ করে। সাইফুদ্দিনের ঐ ওভার থেকে ১৯ রান পায় পাকিস্তান। 
১৩তম ওভারে পাকিস্তান শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন বাংলাদেশের পেসার হাসান। ওভারের তৃতীয় বলে পাকিস্তানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গেন তিনি। হাসানের স্লোয়ারে মিস টাইমিংয়ে ব্যাটের উপরের অংশে বল আকাশে উঠে যায়। ডিপ কাভারে সেই ক্যাচ নেন বদলি ফিল্ডার মোসাদ্দেক হোসেন। ৯টি চারে ৪০ বলে ৫৫ করে করেন বাবর। এক বল পর আবারও উইকেট শিকারে মাতেন হাসান। দারুন এক ইয়র্কারে ক্রিজে নতুন ব্যাটার হায়দার আলির স্টাম্প উপড়ে ফেলেন হাসান। ২ বল খেলে খালি হাতে ফিরেন হায়দার। 
২ রানে হাসানের জোড়া আঘাতের পর ১৩ ওভার শেষে ২ উইকেট ১০২ রান হয় পাকিস্তানের। এরপর পাকিস্তানকে চেপে ধরার চেষ্টা করে বাংলাদেশ। কিন্তু ১৫তম ওভারের সাকিবের শেষ তিন বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৪ রান তুলেন চার নম্বরে নামা নাওয়াজ।
১৬তম ওভারের প্রথম বলে টি-টোয়েন্টিতে ২২তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন রিজওয়ান। এমন অবস্থায়  শেষ ৪ ওভারে ৩৭ রান দরকার পড়ে পাকিস্তানের। ১৭তম ওভারে সাইফুদ্দিনের প্রথম দুই বলে চার মারেন নাওয়াজ। ঐ ওভার শেষে ১২ রান উঠে। ১৮তম ওভারে হাসান দেন ১১ রান। 
শেষ ২ ওভারে ১৪ রানের সহজ সমীকরনে দাঁড়িয়ে পাকিস্তান। প্রথমবারের মত বল হাতে আক্রমনে এসে রিজওয়ানের উইকেট তুলে নিয়ে ৬ রান দেন সৌম্য। ৪টি চারে ৫৬ বলে ৬৯ রান করেন রিজওয়ান। নাওয়াজের সাথে তৃতীয় উইকেটে ৩৬ বলে ৬৪ রানের জুটি গড়ে পাকিস্তানের জয়ের পথ সহজ করেন ওপেনার রিজওয়ান। 
শেষ ওভারে পাকিস্তানের দরকার পড়ে ৮ রান। বল হাতে ছিলেন প্রথম ৩ ওভারে ৪২ রান দেয়া সাইফুদ্দিন। সাইফুদ্দিনের প্রথম চার ডেলিভারিতে ৭ রান নেন নাওয়াজ ও আসিফ। পঞ্চম বলে চার মেরে পাকিস্তানের জয় নিশ্চিত করেন নাওয়াজ।
মাত্র ২০ বলে ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় অপরাজিত ৪৫ রান করেন নাওয়াজ। ২ রানে অপরাজিত থাকেন আসিফ। বাংলাদেশের হাসান ৪ ওভারে ২৭ রানে ২ উইকেট নেন। সৌম্য নেন ১ উইকেট। বাকিদের মধ্যে তাসকিন ৪ ওভারে ৩২, শরিফুল ৪ ওভারে ৩০, সাইফুদ্দিন ৩ দশমিক ৫ ওভারে ৫৩ ও সাকিব ৩ ওভারে ২৮ রানে উইকেটশূন্য ছিলেন। ম্যাচ সেরা হন রিজওয়ান। 
স্কোর কার্ড (টস-বাংলাদেশ) :
বাংলাদেশ ইনিংস : 
শান্ত ক রিজওয়ান ব ওয়াসিম ১২
সৌম্য ক শাদাব ব নাসিম ৪
লিটন ক ওয়াসিম ব নাওয়াজ ৬৯
সাকিব ক শাদাব ব নাসিম ৬৮
আফিফ রান আউট ১১
ইয়াসির ক নাওয়াজ ব ওয়াসিম ১
নুরুল অপরাজিত ২
সাইফুদ্দিন অপরাজিত ১
অতিরিক্ত (ও-৫) ৫
মোট (৬ উইকেট, ২০ ওভার) ১৭৩
উইকেট পতন : ১/৭ (সৌম্য), ২/৪১ (শান্ত), ৩/১২৯ (লিটন), ৪/১৬৭ (সাকিব), ৫/১৭০ (ইয়াসির), ৬/১৭০ (আফিফ)। 
পাকিস্তান বোলিং : 
নাসিম : ৪-০-২৭-২ (ও-২), 
হাসনাইন : ৪-০-৩৮-০ (ও-১),
ওয়াসিম : ৪-০-৩৩-২ (ও-১), 
শাদাব : ৪-০-৩১-০ (ও-১), 
নাওয়াজ : ৩-০-৩৭-১,
ইফতেখার : ১-০-৭-০। 
পাকিস্তান ইনিংস :
রিজওয়ান ক শান্ত ব সৌম্য ৬৯
বাবর ক মোসাদ্দেক ব হাসান ৫৫
হায়দার ক বোল্ড ব হাসান ০
নাওয়াজ অপরাজিত ৪৫
আসিফ অপরাজিত ২
অতিরিক্ত (লে বা-১, নো-১, ও-৪) ৬
মোট (৩ উইকেট, ১৯.৫ ওভার) ১৭৭
উইকেট পতন : ১/১০১ (বাবর), ২/১০১ (হায়দার), ৩/১৬৫ (রিজওয়ান)। 
বাংলাদেশ বোলিং : 
হাসান : ৪-০-২৭-২, 
তাসকিন : ৪-০-৩২-০ (ও-২), 
শরিফুল : ৪-০-৩০-০, 
সাইফুদ্দিন : ৩.৫-০-৫৩-০ (ও-১), 
সাকিব : ৩-০-২৮-০, 
সৌম্য : ১-০-৬-১ (ও-১)।
ফল : পাকিস্তান ৭ উইকেটে জয়ী। 
ম্যাচ সেরা : মোহাম্মদ রিজওয়ান (পাকিস্তান)। 

আপনি কি মনে করেন?

0 টি পয়েন্ট
উপনোট ডাউনভোট

একটি মন্তব্য

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ: লিওয়ানদোস্কির দুই গোলে ইন্টারের বিপক্ষে হার এড়ালো বার্সেলোনা

চার ম্যাচ হেরেও উন্নতি দেখছেন সাকিব