ভিতরে

গোপালগঞ্জে কালের সাক্ষী উজানী রাজবাড়ী আজও দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে

॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২: জেলায় জমিদারদের প্রাচীন ভাস্কর্য শিল্পের নির্দশনগুলো নিয়ে কালেরসাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা উজানী রাজবাড়ী আজও দর্শনার্থীদের দৃষ্টি কেড়ে নিচ্ছে। 
মহারাণী ভিক্টোরিয়ার আমলে যশোর থেকে রায় গোবিন্দ ও সুর নারায়ণ নামক দুই জমিদার বংশধর গোপালগঞ্জের মুকসুদপরের উজানী গ্রামে বসতি স্থাপন করেন এবং তেলিহাটি পরগনা পওন নিয়ে শুরু করেন এলাকার জমিদারী প্রথা। সেই সুবাদে উজানীতে নির্মিত হয় বিভিন্ন কারুকার্য খচিত দ্বিতল-ত্রিতল বিশিষ্ট জমিদারদের বসতের জন্য দালানবাড়ি, যা বর্তমানে রাজবাড়ি নামে পরিচিত। সেই সঙ্গে জমিদাররা নির্মাণ করে পাকা বৈঠকখানা, শান বাঁধানো ঘাট, টেরাকোটা সমাধি মঠ ও মন্দির। জমিদারদের এসব প্রাচীন ভাস্কর্য শিল্পের অনুপম নির্দশন ধ্বংসের মুখোমুখি অবস্থায় কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আজও দর্শকদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। এখন টিকে থাকা জমিদার সুর নারায়ণের প্রোপৌত্র প্রশান্ত রায় দর্শনার্থীদের কাছে বলে যান সেই জমিদারী আমলের রূপকথার ইতিহাস।  
তিনি জানান, অবিভক্ত ভারত বিভাগ ও জমিদারি প্রথা বিলুপ্তি হওয়ার পর এখানকার জমিদাররা ভারতে চলে গেলেও তিনি পৈত্রিক নিবাস ছেড়ে যাননি। জমিদাররা চলে গেলেও থেকে যায় তাদের স্মৃতিচিহগুলো। সংস্কার আর সংরক্ষণের অভাবে সে চিহ গুলো আজ ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে। ভেঙে পড়ছে পাচিল ঘেরা দালানবাড়ি, মন্দির, মঠ ইত্যাদি। প্রাচীনভাস্কর্য শিল্পের অনুপম টেরাকোটা শৈলীর নির্মিত জমিদারদের মঠটির ছাদভেঙ্গে পড়েছে। এছাড়া গুপ্তধনের সন্ধানে খোড়াখুড়ি, ভাংচুর করে কতিপয় লোকজন মাঠটিকে বিকৃত করে ফেলেছে। এই মাঠটি প্রায় ৩০ হাত মাটির নিচে দেবে গেছে। জমিদার বাড়ির সন্নিকটে কালীমন্দিরটি ও ভগ্নদশায় পতিত। এই মন্দিরের কষ্টিপাথরের কালীমূর্তিটি অনেক আগেই কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। জমিদারবাড়ি সংলগ্ন বিশাল দিঘিটি ও দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার করা হয়নি। উজানীর অদূরে মহাটালী গ্রামে রয়েছে জমিদার আমলের আরও একটি প্রাচীন মন্দির ও ধর্মরায়ের বাড়িতে আছে বিশাল দিঘি। দীর্ঘদিন ধরে এগুলো কোন সংস্কার না করায় ক্রমে বিলুপ্ত হওয়ার পথে। 
প্রশান্ত রায়ের কাছ থেকে আরও জানা যায়, জমিদারদের ফেলে যাওয়া সম্পদের প্রায় ৭০ ভাগ জমি জায়গা এলাকার কিছু প্রভাবশালী মহল ভয়ভীতি দেখিয়ে ছলচাতুরি করে জাল দলিল ও বল প্রয়োগের মাধ্যমে দখল করে নিয়েছে। বাংলা ১৩৫২ সালের ঝড়ে তহশিলের বিভিন্ন কাগজপত্র নষ্ট হয়ে যায়। এই সুযোগে এলাকার ওই প্রভাবশালীরা জমিদারী সম্পত্তির বেশকিছু অংশ দলিল করে নেন। 
 প্রশান্ত রায় বলেন- তৎকলীন চান্দা বিলসহ প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর এলাকা নিয়েছিল তাদের জমিদারী। আর এই জমিদারী এলাকা বিভিন্ন অংশে এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা স্থাপনা, নিদর্শন। 
গোপালগঞ্জের কবি,সাংবাদিক ও ইতিহাস গবেষক রবীন্দ্র নাথ অধিকারী বলেন, গোপালগঞ্জে জেলার ২২টি জমিদারীর মধ্যে উজানী জমিদারদের জমিদারী ছিল দ্বিতীয় বৃহত্তর। তারা অত্যন্ত প্রজা দরদী ছিলেন। ভোগ বিলাসের চেয়ে জনসেবার দিকেই তদের লক্ষ্য ছিল বেশি। তারা শিক্ষা প্রসারে কাজ করেছে। এছাড়া দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করে আত্মপীড়িত মানুষের সেবা করেছেন। দুর্ভিক্ষের সময় প্রজাদের খাদ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন। প্রজাদের যে কোন সমস্যার সমাধান করেছেন। অত্যাচার নির্যাতনের পরিবর্তে ভালাবাসা দিয়ে তারা প্রজাদের মন জয় করেছেন। উজানীর জমিদাররা উজানীতেই বসবাস করতেন। প্রজাদের হাসি, কান্না, দুঃখ বেদনার ভাগী হতেন। প্রজাদের কল্যাণে কাজ করতেন। এই কারণে উজানীর জমিদারদের প্রতি বিল চান্দা এলাকার মানুষের শ্রদ্ধা বোধ এখনো বিদ্যমান। এই জমিদার বংশের অবদানের কথা নতুন প্রজন্মের কাছে জানান দিতে জমিদিার বাড়িটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। এটি সংরক্ষণ করলে এটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

আপনি কি মনে করেন?

0 টি পয়েন্ট
উপনোট ডাউনভোট

একটি মন্তব্য

হেল্পলাইনের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা প্রদানে ১০০ উদ্যোক্তাকে সম্মাননা

ঋতু উৎসবের শুরু মূলত রবীন্দ্রনাথের হাত ধরেই : সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী