ভিতরে

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের বিভিন্ন চাবাগানে আবীর খেলা শুরু

জেলার চুনারুঘাটের বিভিন্ন চা বাগানে আজ সকাল থেকে  রঙ বা আবীর খেলায় মেতে উঠেছেন চা জনগোষ্ঠীর লোকজন। এটিকে তারা ফাগুয়া উৎসব বলেন। আবার অনেকেই এটিকে দোল পূজা, লালপ পূজা, হোলি কিংবা পূর্নিমা তিথি বলে থাকেন। ফাগ্লুন মাসের পুর্ণিমা তিথিতে হয় বলেই একে ফাগুয়া বলেই জানে চা বাগানের শ্রমিকরা। নেচে গেয়ে রংয়ের আর আবির মেখে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ানোতে তারা বেশ আনন্দ পায়। সকাল ১০টায় শুরু হয়েছে এ হোলি বা লাল পূজা। সকাল থেকেই সব বাগানেই ছিল উৎসব আর রঙের খেলা। চলবে রোববার পর্যন্ত।
সকালে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, নানান রঙের পসরা বসেছে বাগানের বস্তিতে। সকল বয়সীরাই নেচে গেয়ে এবং একে অপরকে রঙ লাগিয়ে মেতে উঠেছেন আবীর উৎসবে। ঢোলক আর বাদ্য নিয়ে একটি দল বাড়ি বাড়ি গিয়ে গানের তালে নৃত্য করছেন। দলবেধে সবাই উপভোগ করছেন এ নৃত্যু। সকল চা শ্রমিকদের বাড়ির আঙিনা সাজানো হয়েছে নতুন রঙে। অনেকেই আঙিনা ও ঘরের দেয়ালে একেছেন আল্পনা। সবস্থানে রঙ মেখে একাকার। বেগুনি, নীল, আকাশি, সবুজ, হলুদ, কমলা লাল- কী নেই? যে দিকে তাকানো যায় সেদিকেই রঙের ছড়াছড়ি। নারী-পুরুষ, আবাল-বৃদ্ধ সব বয়সীরা মেতে ওঠেছে ফাগুয়া উৎসবে। একে অপরের দিকে রং ছুড়ে মারছে, গান গাইছে, নাচছে। তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরী এমনকি ৭০-৭৫ বছরের বৃদ্ধরাও আনন্দ মেতে উঠেন। প্রাণের উচ্ছ্বলতায় বয়সের ভেদাভেদ ভুলে গেছে সবাই। একে অপরকে আবীর দিয়ে রাঙিয়ে দেয়ার পাশাপাশি চা বাগান এলাকায় কেউ এলে তাকে আনন্দ সহকারে রাঙিয়ে দেয়া হচ্ছিল। ফাগুয়া উৎসবকে স্থানীয় ভাবে লাল পূজা বা রংপুজাও বলে। তবে এটি হোলি পুজা নামেই সবাই জানে। বাগান কতৃপক্ষ এ উৎসবে  শ্রমিকদেরকে ছুটি দিয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারী ছুটি থাকায় শিশুদের আনন্দ উল্লাস ছিল চোখে পড়ার মত।
চুনারুঘাট উপজেলার চান্দপুর, চন্ডিছড়া, নালুয়া, আমু, লস্করপুর, চাকলাপুঞ্জি, রেমা, পারকুল, শ্রীবাড়ি, দেউন্দিসহ বিভিন্ন চা বাগানে চলছে এ পূজা।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নিপের পাল জানান, একসময় সপ্তাহব্যাপি হত এ উৎসব। আয়োজনও ছিল দেখার মত। এখন এ উৎসবে আমেজ অনেক কম। তবে এবছর সব বাগানেরই এ উৎসব আয়োজন করা হয়েছে স্থানীয়ভাবে। এ উসবের মূল উদ্দেশ্য হল ¯্রষ্টা যেন প্রকৃতিকে রাঙিয়ে দেন নানান রঙে। কারণ প্রকৃতি বিবর্ণ হলে শুধু চা শ্রমিকরাই নয়, সকল মানুষের জীবনে নেমে আসে কষ্ঠ। 
তিনি আরও জানান, ফাগুয়া উৎসবের উৎপত্তি ভারতে। এটিকে সাধারণত হোলি খেলা উৎসব বলে। প্রতিবছর পূর্ণিমা তিথিতে ফাল্গুন মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত ফাগুয়া উৎসব চলে। উৎসব উপলক্ষে চা বাগানে ছুটি দেয়া হয়েছে। চা বাগানে এ উৎসব যে দিন শুরু হয় সেই দিন থেকে আরও ১৫ দিন পর্যন্ত তার রেশ থাকে।আজীবন অভাবের সংসারের চা শ্রমিকরা ফাগুয়া উৎসব এলে তাদের ঘরে ঘরে আনন্দ উৎসব দেখে মনেই হয়না তারা স্বল্প মজুরীর শ্রমিক। সারা বছরে এ এক সপ্তাহই রঙে রঙে সাজানো থাকে শ্রমিকদের মন। আর না হলে সারাবছরই চা শ্রমিকদের জীবন থাকে বিবর্ণ। এ উৎসবে ঘরে ঘরে আয়োজন করা হয় পিঠা-ফুলিসহ নানা মুখরোচক খাবারের। 
চা শ্রমিক সন্তান ও ব্যাতিক্রম চা ছাত্র সমাজ এর সভাপতি রনি গোয়ালা জানালেন, বছরে অনেকগুলো উৎসবের মধ্যে অন্যতম দুইটি উৎসব চা-জনগোষ্ঠীর মানুষজন আনন্দের সুযোগ পায়। একটি হল বাঙালির সনাতন হিন্দু ধর্মের দুর্গাৎসব। এর পরই রঙের উৎসব ফাগুয়া। ছন্দ-তাল লয়হীন চা শ্রমিকের কঠিনতম জীবনে ফাগুয়া উৎসব মহাআনন্দের জোয়ার নিয়ে আসে। শুধুই রং, শুধুই রঙের ছড়াছড়ি। ছোপ ছোপ রঙের দাগ লেগেই থাকে চা বাগানের অলিগলিতে, শ্রমিক লাইন, বাড়িঘরের আঙিনায়। দলবেধে চা শ্রমিক সন্তানরা আনন্দে মেতে উঠেন এই উৎসবে। এবারো নালুয়া চা বাগানের পর্যটন স্পট দমদমে বিশাল আয়োজন করা হয়েছে এ উৎসবকে কেন্দ্র করে।

আপনি কি মনে করেন?

0 টি পয়েন্ট
উপনোট ডাউনভোট

একটি মন্তব্য

বিশ্ব কিডনি দিবস আগামীকাল

গোপালগঞ্জের জলাবদ্ধ ও অনাবাদি জমি চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন হানিফ