ভিতরে

মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দু’আসামি গ্রেফতার

একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক দু’আসামিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। 
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, নকিব হোসেন আদিল সরকার (৬৯) ও  মো. মোখলেছুর রহমান মুকুল (৬৭)।
সোমবার রাতে র‌্যাব-২ এর সদস্যরা নকিব হোসেনকে রাজধানীর দক্ষিনখান থেকে এবং মোখলেছুর রহমানকে আশুলিয়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।
নকিব হোসেন ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানার মৃত মাহাতাব উদ্দিন সরকার ওরফে গেদু চেয়ারম্যানের পুত্র ও মোখলেছুর রহমান একই থানার মৃত আব্দুল খালেক সরকারের পুত্র।  
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে  র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। র‌্যাবের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় ময়মনসিংহের ত্রিশালের কাকচর গ্রামের ইউনুছ আলী নামক একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নদী পারাপারে সহযোগি মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জুন-জুলাইয়ের দিকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সহযোগি হিসেবে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা ময়মনসিংহের ত্রিশালের আহমেদাবাদে একটি ক্যাম্প স্থাপন করে। মুক্তিযোদ্ধাদের নদী পারাপারে সহযোগিতার কারণে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা বীর মুক্তিযুদ্ধা ইউনুছ আলীকে ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায় এবং টর্চার সেলে নির্যাতনের পর ১৫ আগস্ট সকালে তাকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে।
র‌্যাব জানিয়েছে,  এঘটনায় মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ইউনুস আলীর ছেলে ২০১৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের বিচারিক আদালতে নকিব হোসেন আদিল সরকার ও মো. মোখলেছুর রহমান মুকুলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে আদালত বিচারিক কার্যক্রমের জন্য মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করেন।  ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলাটি গ্রহণ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মুক্তিযুদ্ধের সময় উভয়ের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে অভিযোগের তদন্ত শেষে তদন্ত সংস্থা নকিব হোসেন আদিল সরকার ও মো. মোখলেছুর রহমান মুকুলসহ ৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। মামলার অভিযুক্ত দু’জন আসামি রায়ের আগে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত ২৩ জানুয়ারি নকিব হোসেন আদিল সরকার ও মো. মোখলেছুর রহমান মুকুলসহ ৭ জনকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন। 
র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার মূখপাত্র বলেন, গ্রেফতারকৃত নকিব হোসেন মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয় এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে তাদের বিভিন্ন অপকর্মে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করে। সে ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকায় স্থানীয় রাজাকার বাহিনী গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নকিব হোসেন ও মোখলেছুর রহমান মুকুল মু্িক্তযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়ে ত্রিশাল এলাকায় স্বাধীনতাকামী নিরীহ বাঙ্গালিদের আটক, নির্যাতন, অপহরণ, হত্যা, লুটপাট, ঘরবাড়ি লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও গণহত্যার সাথে জড়িত থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে। 
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন,  আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে তারা নিয়মিত বাসা পরিবর্তন করত। এসময় পরিবারের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে তারা অন্যের রেজিস্ট্রেশনকৃত সীমকার্ড দিয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করত। তারা  দু’জন পারস্পারিক আতœীয় বটে। কিন্তু তাদের দু’জনেরই পিতা ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল (ওই) এলাকার চেয়ারম্যান ছিলেন।

আপনি কি মনে করেন?

0 টি পয়েন্ট
উপনোট ডাউনভোট

একটি মন্তব্য

নিবন্ধন অবৈধ রায় বিষয়ে আপিল প্রস্তুত করতে জামায়াতকে ২ মাস সময়

তারেক-জোবায়দাকে আদালতে হাজির হতে গেজেট প্রকাশ