ভিতরে

রংপুরের পীরগঞ্জে পরিবেশ বান্ধব কৌশলে নিরাপদ ফসল উদপাদন

// এটিএম মাজহারুল আলম মিলন //
রংপুর, ৯ ডিসেম্বর, ২০২২: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষি ব্যবস্থাপণা অনেকটাই পাল্টে গেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সারাদেশের মতো পীরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় কৃষি বিভাগের কার্যক্রম দেখা গেছে। বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে চাষাবাদ পদ্ধতিতে পরিবর্তণ আনা হচ্ছে। ফসল চাষাবাদে প্রযুক্তিগত কৌশল ব্যবহারে কৃষি ফসলের চাষ করছেন চাষিরা। 
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কাবিলপুর আইপিএম মডেল ইউনিয়নে কৃষক মাঠ স্কুলের মাধ্যমে ৫ শতাধিক কিষা-কিষাণী প্রশিক্ষণ নিয়ে পরিবেশ বান্ধব কৌশলের মাধ্যমে ফুল কফি, বাঁধা কফি, সিম এবং বেগুন চাষ করেছেন। ক্যামিক্যাল বালাইনাশক পরিহার করে জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের পর নিরাপদ ফসলে ভাল ফলন হওয়ায় মুনাফার সম্ভাবনায় চাষিদের মাঝে ব্যপক সাড়া পড়েছে।
কাবিলপুর আইপিএম মডেল ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে রবি ফসল চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পরিবেশ বান্ধব কৌশলে ফসলের চাষাবাদ করলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায় এবং বিষ মুক্ত সবজি পাওয়া যায়। জামালপুর গ্রামের সিম চাষি আবু তাহের মিয়া বলেন, কৃষি প্রযুক্তি এখন চাষিদের অনেক দূর এগিয়ে দিয়েছে। এতো দিন ফসলের মাঠে পোকা দমনে কীটনাশক ব্যবহার করে জমি ও নিজেদের ক্ষতি করেছি। এখন থেকে সবজি চাষে পরিবেশ বান্ধব কৌশলে চাষাবাদে মনযোগি হয়েছি আমরা।
হলুদ ফাঁদ নিয়ে একই গ্রামের মোকছেদ আলী বলেন, সিম খেতে হলুদ ফাঁদে এফিড, জ্যাসিট এবং সাদামাছি আটকে পরে। এই ফাঁদে পোকা অতিসহজেই আঁটকে পরে। সিম ক্ষেতে এখন পোকার আক্রমণ অনেকটাই কমেছে। সিম গাছে আগের চেয়ে এবার ভালো সিম ধরেছে। 
কৃষ্ণপুর গ্রামের ফুল কফি চাষি  রিনু বলেন, মালচিং পদ্ধতিতে পরিবেশ বান্ধব কৌশলে ফুল কফির চাষ করেছি। মালচিং পদ্ধতিতে ফসলের চাষ করলে পলিথিন নিচের মাটিতে পানি ধারণ করে রাখে এবং আগাছা হয় না। এতে করে ফসলের জমিতে রস সবসময় সমানভাবে থাকে। বাড়তি ভাবে পানি সেচ দেয়ার প্রয়োজন অনেক কম হয়। আবাদও ভালো হয়।
একই গ্রামের জয়নাল মিয়া বলেন, পরিবেশ বান্ধব প্রকল্পের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদনের ফেরোমন ফাঁদের আওতায় বেগুন, ফুলকফি ও সিম ফসলের ফল ছিদ্রকারী পোঁকা পুরুষ মদ ফাঁদের ভিতর প্রবেশে মারা যায়। বিশেষ করে জৈবিক পদ্ধতিতে বালাই দমন ব্যবস্থাপনা যে সব উপাদান পণ্য রয়েছে এর মধ্যে অন্যতম হলো উপকারী বন্ধু পোকার লালন ও পোকার সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার। তবে এই ফাঁদের  মাধ্যমে টাংকির ভিতর তাবিজ ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে আর এই তাবিজের গন্ধ পেয়ে পুরুষ পোকা টাংকির পানিতে ডুবিয়ে মারা যায়। এর ফলে বাহিরের কীটনাশক ফসলের জমিতে ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না। 
স্থানীয় চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবি জানান, পরিবেশ বান্ধব নিরাপদ ফসল হাট বাজারে পৃথকভাবে বিক্রির ব্যবস্থা করা দরকার। নিরাপদ সবজির সাথে গতানুগতিক সবজি মিশ্রন এড়িয়ে যেতে পৃথক বাজার ব্যবস্থা জরুরি। এতে সাধারণ মানুষের সচেতনার পাশাপাশি নিরাপদ সবজি উদপাদনকারি কৃষকরা ভালো মুনাফা পাবেন।  
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামন সরকার জানান, পরিবেশ বান্ধব কৌশলে নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য কাবিলপুর ইউনিয়নের জামালপুর, কৃষ্ণপুর, হামিদপুর, জয়পুরে  ৫ শত কিষাণ কিষাণীদের ২০টি আইপিএম মাঠ স্কুলের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে পরিবেশ বান্ধব নিরাপদ কৃষি উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে উপকরণ পেয়ে উক্ত এলাকার মানুষ পরিবেশ বান্ধব কৌশলে নিরাপদ ফসল উৎপাদন কাজে ঝুঁকে পড়ে। 
ওই এলাকায় পরিবেশ বান্ধব কৌশলে নিরাপদ ফসল চাষের ব্যপক প্রচার ছড়িয়ে পড়েছে এর পর থেকে নিরাপদ ফসল উৎপাদনে উপজেলা কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। কৃষি বিভাগের লোকজন সবসময় কৃষকের পাশে রয়েছে। এছাড়াও উপজেলা কৃষি বিভাগ নিরাপদ ফসল ক্রয়বিক্রয় নিয়ে আলাদা বাজার ব্যস্থার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে।
রংপুর জেলার উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, কৃষি বান্ধব সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় পরিবেশ বান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদনে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। ভবিষ্যতে এই নিরাপদ ফসল রপ্তানি করে বৈদেশিক মৃদ্রা র্অজনের সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে।

আপনি কি মনে করেন?

0 টি পয়েন্ট
উপনোট ডাউনভোট

একটি মন্তব্য

শেরপুরে রাস্তার পাশে সবজি চাষে শত-শত পরিবারের বাড়তি আয় 

ভারতকে হোয়াইটওয়াশ করতে চায় অদম্য টাইগাররা