ভিতরে

সিডলেস বারমাসী লেবু চাষে মুকসুদপুরের সামাউলের বাজিমাত 

॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ৪ ডিসেম্বর, ২০২২ : সিডলেস বারমাসী লেবু চাষে বাজিমাত করেছেন মোঃ সামাউল ইসলাম (৫৫)। প্রতিদিন তিনি তার বাগান থেকে ১০ হাজার লেবু বিক্রি করছেন। সারা বছর তিনি এ বাগান থেকে লেবু বিক্রি করে আসছেন। লেবু থেকেই বছরে তার আয় হচ্ছে প্রায় ৭৫ লাখ টাকা। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তার লেবু যাচ্ছে। লেবু বাগান  করে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার কদমপুর গ্রামের সফল কৃষক  মোঃ সামউল ইসলাম এলাকায় অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। প্রতিদিন পাইকেররা তার বাগান থেকে লেবু কিনে নিয়ে যান। এ লেবু তারা গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেন। লেবু ক্রয় বিক্রয়ের সাথে জড়িতরাও ভালো টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন। এছাড়া সামাউলের লেবু বাগানে প্রতিদিন ২৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন। এখান থেকে প্রাপ্ত পারিশ্রমিক দিয়ে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে ভালো আছেন।
সফল কৃষক মোঃ সামাউল ইসলাম বলেন, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের  গোপালগঞ্জ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের সহযোগিতায় ৩ বছরে আগে আমি কদমপুর গ্রামের  ১৫ একর জমি লিজ নিয়ে সিডলেস বারমাসী লেবুর চাষাবাদ শুরু করি। আমরা বাগানে ১২ হাজার লেবু গাছ আছে। প্রথম বছর থেকেই আমি লেবুর ফলন পেতে শুরু করি। ফাল্গুন, চৈত্র ও বৈশাখ মাসে এ লেবুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। তখন প্রতিটি লেবু ৫ থেকে ৭ টাকা দরে বিক্রি করি। ওই ৩ মাসে  আন্তত ৪৫ থেকে ৬০ লাখ টাকার লেবু বিক্রি হয়। এছাড়া বছরের অন্য ৯ মাস প্রতিটি লেবু ১ টাকা থেকে ৩ টাকা দরে বিক্রি করি। এ সময়ে আরো  ৪০ লাখ টাকার লেবু বিক্রি করতে পারি। বাগানে এসে পাইকেররা নগদ টাকায় লেবু কিনে নিয়ে যায়। তারা এ লেবু গোপালগঞ্জ , ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেন। আমার বাগানের লেবুর ফ্লেভার ভালো। লেবুতে কোন বিঁচি নেই। এছাড়া এ লেবুতে প্রচুর রস আছে। লেবুটি সালাদ ও শরবতে বেশি ব্যহৃত হয়। এ কারণে বাজারে আমার লেবুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। লেবুর বাগান করে আমি লাভবান হয়েছি। আমার দেখাদেখি মুকসুদপুর ও আশপাশের উপজেলা গুলোতে অন্তত ১০টি বাণিজ্যিক লেবু বাগান গড়ে উঠেছে। তারাও লেবুর চাষাবাদ করে ভালো আছেন। 
কৃষি  গবেষণা ইনস্টিটিউটের  গোপালগঞ্জ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড.এমএম কামরুজ্জামান বলেন, মোঃ সাউল ইসলাম একজন সফল কৃষক। তিনি আমাদের সহযোগিতায় লেবু বাগানের পাশাপাশি অনেক আগেই  মিশ্র ফল বাগান করেছেন। তার বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির কুল, মাল্টা, ড্রাগনসহ বিভিন্ন জাতের ফল রয়েছে। তিনি ৩ বছরে আগে আমাদের উৎসাহে সিডলেস বারমাসী লেবু চাষ শুরু করেন। আমরা তাকে চারা, সার, ছত্রাক নাশক, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছি। এখন তার লেবু বাগান থেকে প্রচুর আয় হচ্ছে। তার দেখাদেখি অনেকেই লাভজনক সিডলেস বারমাসী লেবুর চাষাবাদে ঝুঁকে পড়েছেন। 
সামাউলের লেবু বাগানের শ্রমিক ফিরোজ শেখ (৫৬) বলেন,এখানে প্রতিদিন আমরা ২৫ জন শ্রমিক কাজ করি। লেবু গাছ পরিচর্যা, সার, সেচ প্রয়োগ, লেবু তোলাসহ বিভিন্ন বিভিন্ন কাজ এখানে করতে হয়। প্রতিদিন আমরা যে পারিশ্রমিক পাই তা দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে ভালোভাবে সংসার চালাতে পারি। লেবু বাগানের বদৌলতে এখানে আমাদের ২৫ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। 
লেবুর পাইকের মুকসুদপুর উপজেলার বায় বল্লভদি গ্রামের মোঃ কামাল হোসেন (৫০) বলেন, আমি প্রতিদিন সামউলের বাগান থেকে ৩ হাজার লেবু সংগ্রহ করি। প্রতিটি লেবু দেড় থেকে আড়াই টাকা দরে ক্রয় করি। মুকসুদপুর সহ আশপাশের হাটবাজারে প্রতিটি লেবু আড়াই থেকে ৪ টাকা দরে বিক্রি করি। প্রতিদিন ৩ হাজার লেবু বিক্রি করে খরচ বাদে আমার কমপক্ষে ২ হাজার টাকা লাভ থাকে। লেবু বিক্রির আয় দিয়ে আমার সংসার চলে। প্রতিদিন কিছু টাকা সঞ্চয় করি।
কদমপুর গ্রামের কৃষক মোঃ ওবায়দুর রহমান (৫২) বলেন, সামাউল একজন সফল কৃষক। তিনি ১৫ বছর আগে যশোর থেকে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে আসেন। তিনি এখানে এসে কলার চাষ শুরু করেন। কলায় সাফল্য পাওয়ার পর তিনি বারমাসী বারি পেয়ারার চাষ করেন। পেয়ারা চাষ করে তিনি মোটা অংকের টাকা ঘরে তোলেন। এরপর তিনি মাল্টা, বিভিন্ন প্রজাতির কুল ও লেবুর চাষ আরম্ভ করেন। এসব ফল চাষাবাদে তিনি ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। তিনি একজন আদর্শ কৃষক। তিনি জানেন কিভাবে ফসল ফলাতে হয়। তাকে এ কাজে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সব ধরনের সহায়তা করছে। সামউলও আন্তরিকভাবে কাজ করে এলাকায় অনুকারণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার দেখাদেখি এখন আমাদের এলাকায় ফল চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, ফল চাষ লাভ জনক। মুকসুদপুরের কৃষক মোঃ সামাউল ইসলাম শুরু থেকেই ফল চাষ করে আসছেন। তিনি ফল চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। সেই সাথে তার ভালো আয় হচ্ছে। তিনি এলাকায় অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সামউল দেখিয়ে দিয়েছেন প্রচলিত ফসল ধান, পাট, আখ , সরিষা, মসুর ও পেঁয়াজ আবাদের তুলনায় ফল চাষ অত্যন্ত লাভ জন। ফল চাষ করলে সারা বছর এখান থেকে আয় করা যায়। এছাড়া ফলে পুষ্টি ও অর্থ দুইই মেলে। তার দেখাদেখি অনেক প্রদীপ্ত কৃষক ফল চাষ করছেন। তারা সামউলের কাছ থেকে চারা ও পরামর্শ নিয়ে ফল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। আমারও নতুন নতুন ফল চাষিকে প্রশিক্ষণ, পরামর্শসহ সবধরণের সহযোগিতা করছি।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিটিউটের গোপালগঞ্জ সরেজমিন গবেষণা বিভাগের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এইচ.এম খায়রুল বশার বলেন, ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি করে আমরা দেশের মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে চাই। সেই লক্ষ্যে আমরা ২০১৩ সাল থেকে গবেষণার কাজ করছি। গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, পিরোজপুর, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় আমরা ফলের বাগান সৃজনে কৃষককে সবধরনের সহযোগিতা করে আসছি। এ ৫ জেলার কৃষক  ফল চাষে আমাদের উদ্ভাবিত আধুনিক কলাকৌশল গ্রহণ করেছেন। তারা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিটিউট উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল জাতের আম, মাল্টা, পেয়ারা , লেবুসহ বিভিন্ন ফলের চাষাবাদ করেছেন। এখান থেকে তারা ভালো ফলন পেয়ে লাভবান হচ্ছেন। এতে তাদের পুষ্টি ও অর্থ মিলছে।

আপনি কি মনে করেন?

0 টি পয়েন্ট
উপনোট ডাউনভোট

একটি মন্তব্য

নাম বদলে গেল অধরার সিনেমার

নওগাঁয় ৬ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ