ভিতরে

বিরামপুরে কালাইয়ের বড়ি বানিয়ে ৪০ পরিবার স্বাবলম্বী

॥ রোস্তম আলী মন্ডল ॥
দিনাজপুর, ২৫ নভেম্বর, ২০২২: কালাই রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় কুমড়ো মিশানো মুখরোচক তরকারী খাওয়ার বড়ি। এই বড়ি তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন জেলার বিরামপুর উপজেলার বিশ্বনাথপুর গ্রামের দুলাল চন্দ্রসহ ৪০টি পরিবার।
বিরামপুর উপজেলার বিশ^নাথপুর গ্রামে সরেজমিন গিয়ে দেখলাম- কালাইয়ের মধ্য কুমড়া মিশিয়ে বড়ি বানিয়ে কাপড়ের উপর রোদে শুকানো হচ্ছে যতœসহকারে। 
ওই গ্রামের প্রায় ৮০ থেকে ৮৫টি পরিবারের বসবাস। এর মধ্য ৪০টি পরিবার শীতের মৌসুমে কালাইয়ের মধ্য কুমড়ো মিশিয়ে তরকারী খাওয়ার মুখরোচক এই বড়ি বানিয়ে বাজারে বিক্রি করে তারা অনেকেই আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে। তাদের পরিবারে অভাব অনটন অনেকটাই নেই বললে চলে। 
ওই গ্রামের কালাইয়ের বড়ি বানিয়ে বিক্রি করে স্বালম্বী হয়েছে দুলাল চন্দ্র (৩৫) সহ প্রায় ৪০টি পরিবার। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে শীতকালে এই পণ্যটির বেশি চাহিদা ছিল। সেই কারণে শুধু শীতকালেই বড়ি তৈরি করা হতো। সারাদেশে চাহিদা ক্রমশ বেড়েছে। ফলে এই গ্রামের পরিবারগুলোর এখন সারাবছর এভাবে বড়ি বানিয়ে যতœসহকারে শুকানোর পর এলাকাসহ বড়ি দেশের বিভিন্ন স্থান সরবরাহ করে তারা মুনাফা অর্জন করেছে। এখন ঢাকা থেকে ক্রেতারা এসে আগাম তাদেরকে বড়ি বানানোর জন্য তাগিদ দিচ্ছে এবং বানানো বড়ি ক্রয় করে নিয়ে যায়। আধুনিক যুগ হওয়ায় মোবাইল ফোনে এখন বড়ি ক্রয়ের আগাম চাহিদা দিয়ে আগাম অর্থ পরিশোধ করছেন পাইকারেরা। ফলে ওই গ্রামের প্রায় দেড়শত মহিলা ও পুরুষ প্রতিদিন বড়ি বানানোর কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এখন তাদের বানানো বড়ি আর হাট বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। পাইকারেরা বাড়িতে এসে আগাম বড়ি বানানোর চাহিদা দিয়ে নগদ টাকায় বড়ি নিয়ে যায়। তাদের বানানো বড়ি প্রায় শতাধিক ব্যবসায়ী বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে। 
বড়ি বানানোর বিষয় ওই গ্রামের দুলাল চন্দ্র, রবিউল ইসলাম ও জুয়েলের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বড়ি বানানোর প্রধান উপকরণ মাসকালাই, প্রথমে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা পানিতে ভেজাতে হয়। এরপর মেশিনে ভাঙ্গিয়ে ওই মাসকালাই মিশ্রণ তৈরি করা হয়। তারপর মিশ্রণে কুমড়ার সঙ্গে বাটিয়ে কালোজিরা ও অন্যান্য মসলা দিয়ে বড়ির উপকরণ তৈরি হয়। উজ্জ্বল রোদে ফাঁকা স্থান, বাড়ির আঙিনায় খোলা জায়গায় ভোর থেকে মহিলারা বড়ি তৈরির কাজ শুরু করে। টিন বা পাতলা কাপড়ে সারি সারি এটি রোদে রাখা হয় শুকানোর জন্য। দুই থেকে তিনদিন টানা রোদে শুকাতে হয়, এরপর বড়ি বিক্রির উপযোগী হয়।
বড়ি বানানো মহিলা কারিগর সুলতানা, জবারাণী ও শুলেখারাণী জানান, এই বড়ি দিয়ে বোয়াল, বাইম, কৈ, শিং বা শোল মাছের ঝোল বেশ মুখরোচক ও জনপ্রিয় খাবার তরকারী রান্না করা যায়। এটি বানানোর উপযুক্ত সময় শীতকাল। তবে চাহিদা বাড়ায় এখন সারাবছরই বড়ি তৈরি করা হচ্ছে। বিশ্বনাথপুর গ্রামের নারী পুরুষরা সারাবছর ব্যস্ত বড়ি বানানোর কাজে। বাড়ির স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এটি হাত বদল হয়ে চলে যাচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে।
বড়ি তৈরির কারিগর বিশ্বনাথপুর গ্রামের দুলাল চন্দ্র বলেন, ৯ বছরের অভিজ্ঞতা তার, বলেন- মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় হয়। রোজগার করা টাকা দিয়ে পরিবার ও নিজের চাহিদা মিটানো হয়। তিনি বলেন, আমাদের দেখে এলাকার বেশ কিছু পরিবারের নারী-পুরুষরা এই কাজে এখন ব্যস্ত। শীত আসার সঙ্গে-সঙ্গে বড়ি বানানোর ধুম পড়ে যায়। এখানকার বড়ি বেশ সু-স্বাদু। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা যাচ্ছে।
বড়ির কারিগর অধির চন্দ্র জানান, এই পেশা প্রায় ১৫ বছর ধরে করি। তাই আজও তা করে আসছি। প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা করে পাইকারি বিক্রি করা হয়।
স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি মাষকলাই এর বড়ি ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে দোকানীরা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিনিয়তই পাইকাররা এসে আমাদের কাছ থেকে বানানো বড়ি কিনে নিয়ে যায়। এছাড়া স্থানীয় বিভিন্ন হাটেও খুচরা বিক্রয় করা হয়।
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিমল সরকার জানান, তিনি বিশ^নাথপুর গ্রামের বড়ি বানানোর কাজ দেখেছেন এবং তাদের পরিশ্রমের দক্ষ হাতে সুন্দর করে এই বড়ি বানিয়ে মানুষের মুখরোচক নির্ভেজাল খাবার সরবরাহ করছেন। এ জন্য তিনি ওই গ্রামের বড়ি বানানো পুরুষ-মহিলা সবাইকে এ কাজ করতে উৎসাহ দিয়েছেন। তারা বিভিন্ন এনজিওর কাছ থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে এ ব্যবসা করছেন। তিনি তাদেরকে সরকারের ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ এই প্রকল্প থেকে ঋণের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে তাদেরকে আশ^স্ত করেছেন। ইতোমধ্যে তিনি আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পে কর্মকর্তাকে ওই গ্রামের বড়ি বানানো পরিবারগুলোকে সমন্বয় করে ঋণ সহায়তা দিয়ে বড়ি বানানোর কাজে আরো বেগবান করার তাগিদ দিয়েছেন।

আপনি কি মনে করেন?

0 টি পয়েন্ট
উপনোট ডাউনভোট

একটি মন্তব্য

চাঁদপুরের মতলবে ভূমিহীন ১৮০ পরিবারের জন্য ঘরের চাবি হস্তান্তর 

কুমিল্লার ডাকাতিয়া নদীতে মাছ ধরার উৎসব