ভিতরে

কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো থেকে গ্রামবাসীরা পাচ্ছেন নিরবচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবা

 জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছাতে নিরবচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রমের ফলে কমিউনিটি ক্লিনিকের (সিসি) সেবা প্রদানের গতিশীলতাও বেড়েছে। 
সচেতনতামূলক প্রচারণা গ্রামীণ জনগণকে কমিউনিটি পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পেতে উৎসাহিত করছে এবং গর্ভবতী মাসহ অনেককে কমিউনিটি ক্লিনিক (সিসি) থেকে সেবা নিতে দেখা যাচ্ছে।
জেলার তানোর উপজেলার কামারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা তরিমা খাতুন (১৯) বলেন, পাশের কচুয়া কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ যেমন; আয়রন ট্যাবলেট, ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট এবং পরামর্শের সঙ্গে প্রসবপূর্ব (এএনসি) পরিষেবা পেয়ে তিনি খুব খুশি। তিনি বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক তৃণমূল জনগণের কাছে প্রসবপূর্ব (এএনসি), প্রসবোত্তর (পিএনসি) এবং নবজাতকসহ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে গ্রামীণ জনগণের আস্থা অর্জন করেছে।
কচুয়া গ্রামের জসিম উদ্দিনের স্ত্রী নাসরিন বানু (২৬) প্রসবপূর্ব পরিষেবা পেয়েছেন, অন্যদিকে একই গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল করিমের স্ত্রী বানেরা বেগম (২৫) বিনামূল্যে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে পিএনসি পরিষেবা এবং প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো পেয়েছেন।
নিকটবর্তী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লে¬ক্স থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কমিউনিটি ক্লিনিক, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরামর্শের পাশাপাশি ছোটখাটো অসুস্থতা, সাধারণ রোগের চিকিৎসা এবং প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করছে। এছাড়াও দুরারোগ্য অসংক্রামক রোগ সনাক্তকরণ এবং পুষ্টি শিক্ষার পাশাপাশি তৃণমূল জনগোষ্ঠীর মানসিক স্বাস্থ্য বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এই কমিউনিটি ক্লিনিক।
কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) লুৎফুন নাহার বলেন, আমাদের মাতৃ ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা, শৈশবকালীন অসুস্থতার সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা পরিষেবা এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্রে টিকাদানের একটি সম্প্রসারিত কর্মসূচি রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যোনিপথে রক্তপাত, একলাম্পসিয়া, তীব্র মাথাব্যথা ও জ্বর এবং বিলম্বিত প্রসবের মতো গর্ভাবস্থা সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন এমন মায়েদের জন্য তাদের রেফারেল পরিষেবা দিচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পাওয়ায় সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ মা ও শিশু এখান থেকে সেবা গ্রহণ করছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাসহ মাতৃ ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য গ্রামীণ নারীদের জন্যও কমিউনিটি ক্লিনিক এখন একটি আশীর্বাদ।
তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বার্ণবাশ হাসদাক বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য সংশি¬ষ্ট সকল সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সমন্বিত প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।  এছাড়াও সচেতনতামূলক প্রচারণাগুলো গ্রামীণ জনগণকে মেডিকেয়ার পরিষেবা গ্রহণ করতে উৎসাহিত করছে।
জেলার বাগমারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অনিল কুমার সরকার বলেন, গত ২৬ এপ্রিল ২২ তম কমিউনিটি ক্লিনিক দিবস উপলক্ষ্যে গ্রামে গ্রামে সেবা প্রদান কার্যক্রম সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এসব কর্মসূচিতে সেবা প্রদানকারী এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা হয়েছে যাতে তারা এই ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারেন।
স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক বিভাগীয় পরিচালক ডা. গোপেন্দ্র নাথ আচার্য বলেন, দেশের সার্বিক স্বাস্থ্যসেবা বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার বাণিজ্যিকীকরণ নীতির দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে করে বিশেষত নিম্ন আয়ের মানুষ প্রায়ই চিকিৎসা সংক্রান্ত ট্রমার মধ্য দিয়ে যায়। সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির অভাব এই অঞ্চলে একটি সাধারণ দৃশ্য, কিন্তু নিম্ন আয়ের লোকেদের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকের পরিষেবা প্রদান স্বাস্থ্য চিত্রের একটি অনুপ্রেরণামূলক উদাহরণ হয়ে উঠেছে।
যখন জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা ক্রমাগত কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে এবং স্বল্প আয়ের গ্রামীণ লোকদের বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সুযোগ কম, তখন কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিকগুলো স্বাস্থ্যকে রাজনৈতিক এজেন্ডায় অন্তর্ভূক্ত করেছে। 
পাবলিক হেলথ ইমপ্রুভমেন্ট ইনিশিয়েটিভ রাজশাহী (পিএইচআইআইআর) প্রকল্পের ব্যবস্থাপক তোজাম্মেল হক বলেন, এই ক্লিনিকগুলো দরিদ্রদের স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রাপ্তির সুযোগকে উন্নত করেছে বলে ব্যাপক স্বীকৃতি রয়েছে। কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক মা ও শিশুসহ সাধারণ মানুষকে সেবা প্রদান করায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় একটি নীরব বিপ্লব ঘটেছে। ক্লিনিকগুলো ধীরে ধীরে গ্রামীণ জনগণের জন্য আশীর্বাদে পরিণত হয়েছে। 
স্বাস্থ্য বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার বলেন, এই বিভাগের আটটি জেলায় ১ হাজার ৯ শ’ ৯৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। ২০২১ সালে এই অঞ্চলের ৮ লাখ ৯৪ হাজার ৪৫ জন মহিলা মাতৃ স্বাস্থ্যসেবা এবং ৫ লাখ ৮৮ হাজার ৩ শ’ ৩৭ জন শিশু স্বাস্থ্যসেবা পেয়েছেন।
তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে না গিয়ে এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা পেতে পছন্দ করায় কমিউনিটি ক্লিনিকে রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে।

আপনি কি মনে করেন?

0 টি পয়েন্ট
উপনোট ডাউনভোট

একটি মন্তব্য

বন্যা দুর্গত এলাকায় শুকনো খাবার সরবরাহ করবে ইউনিসেফ

কবি সুফিয়া কামাল রচিত সাহিত্যকর্ম নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে : রাষ্ট্রপতি