ভিতরে

হাওরবাসীর জীবনকে গতিশীল করেছে ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম ‘একপে’

জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাও গ্রামের বাসিন্দা মোঃ আব্দুর রহমান ‘একপে’র মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল দিতে পেরে খুবই খুশি। এখন আর তার মাইলের পর মাইল হেঁটে উপজেলা সদরে যেয়ে লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছেনা। সরকারের ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম ‘একপে’ সেবা হাওরের মানুষের জীবনকে করেছে সহজ ও গতিশীল।  
রহমান বলেন, “আগে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য নদী পার হয়ে উপজেলা সদরে গিয়ে লম্বা সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। কিন্তু এখন আমরা ইউডিসি-তে গিয়ে ‘একপে’র মাধ্যমে সব ধরনের বিল পরিশোধ করতে পারছি।” 
তিনি জানান, একপে সেবা চালু হওয়ার আগে বিল দেয়ার জন্য ৫০-১০০ টাকা যাতায়াত খরচ হতো এবং অনেক সময়ও ব্যয় হতো। কিন্তু এখন বাড়ির পাশে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) থেকে গ্যাস বিল, ই-নামজারির আবেদন ও ই-পড়চার ফিসহ সবধরনের বিল বা ফিও পরিশোধ করা যায়। এতে সময় ও টাকা দুইই বাঁচে। 
তিনি বলেন, হাওর এলাকার বাসিন্দারা ডিজিটাল প্রযু্িক্ত সম্পর্কে তেমন না জানলেও ইউডিসি’র সাহায্য নিয়ে ডিজিটাল পেমেন্টের সুবিধা নিতে পারছে।  ইউডিসি ‘আধুনিক প্রযুক্তি ও গ্রামীন জনসাধারণ’ এর সাথে সেতুবন্ধন সৃষ্টি করেছে।    
ছাতক উপজেলার সওদারগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল ওয়াহিদ বলেন, এর আগে ইউটিলিটি বিল, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আমদানী রপ্তানির পারমিট ফিসহ অন্যান্য কাজের জন্য সোনালী ব্যাংক একমাত্র মনোনিত ব্যাংক ছিলো। এজন্য সোনালী ব্যাংকের ছাতক শাখায় গিয়ে ধৈর্য্যরে চূড়ান্ত পরীক্ষা দিতে হতো। ব্যাংকে দীর্ঘ সময় লাইনে দাড়িয়ে থাকাটাও ছিল কষ্টকর। 
তিনি বলেন, “ইউডিসি’র কার্যক্রম চালু হওয়ায় যে কোন ধরনের বিল, ই-পড়চার ফি ইত্যাদি সবই একপে’র মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারছি।” 
একই গ্রামের আব্দুল করিম বলেন, ‘একপে’ সেবা আমাদের হাওরের মানুষের জীবনকে অনেক সহজ করেছে। হাওর এলাকার বাসিন্দারা যার যার গ্রামে থেকেই শহুরে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে এসব জনমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করায় বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান। 
পান্ডারগাঁও ইউডিসি’র উদ্যোক্তা ফয়সাল আহমেদ বলেন, ইউনিয়নের বাসিন্দারা আমার ইউডিসি থেকে ‘একপে’র মাধ্যমে তাদের বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল এবং ই-পড়চার ফি দিচ্ছেন। 
তিনি বলেন, “প্রতিদিন ৩০০-৪০০ মানুষ ইউডিসিতে বিভিন্ন সেবা নিতে আসেন। তারা ‘একপে’ সম্পর্কে জানলেও এর ব্যবহার জানেন না। ইউডিসির মাধ্যমে তাদের এসব সেবা দেয়া হয়।”
ছাতকের সওদারগাঁও ইউনিয়নের আরো একজন ইউডিসি উদ্যোক্তা সুজেল মিয়া জানান, তার সেন্টার থেকে প্রতিদিন দুইশ’রও বেশি সেবা প্রত্যাশী মানুষ ইউটিলিটি বিল, ই-ব্যাংকিংসহ নানা সেবা নিয়ে থাকেন। 
সুজেল মিয়া বলেন, সরকারের এই ডিজিটাল উদ্যোগ হাওড়ের মানুষকে নদী পার হওয়া ও ভাঙাচোরা রাস্তা ব্যবহারের কষ্ট থেকে মুক্ত করেছে। এতে একদিকে যেমন গ্রামের মানুষ সময়মত বিল পরিশোধের সুযোগ পাচ্ছে, পাশাপাশি তাদের সময় ও টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।” 
এটুআই কার্যালয় সুত্র জানায়, সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ রূপকল্প অর্জনে সকল ইউটিলিটি বিল পেমেন্ট সেবা ‘একটি উইন্ডোর’ আওতায় আনার লক্ষ্যে ইউএনডিপির সহযোগিতায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এটুআই এবং আইসিটি বিভাগ এই ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম ‘একপে’ তৈরি করেছে। 
এটুআই এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার (ডিএফএস) তহুরুল হাসান বাসস’কে বলেন, “দেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠি এখন ওয়ান-স্টপ সেবা ‘একপে’র মাধ্যমে ঝামেলাহীনভাবে ইউটিলিটি বিল ও ফি প্রদান সেবা গ্রহণ করছে। এই পেমেন্ট সিস্টেম এমন সহজভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, এতে নি¤œ আয়ের মানুষ ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠিকেও সমন্বিত বিল পেমেন্ট সিস্টেমের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে।”
তিনি বলেন, ডিজিটাল পেমেন্ট গেটওয়ে চালুর পর থেকে সারাদেশের ৬৫১৫,৪০৭ জনেরও বেশি মানুষ ‘একপে’ ব্যবহার করেছে, যেখানে মোট  লেনদেনের পরিমাণ ৫২৫.২৯ কোটি টাকা। 
তহুরুল আরো বলেন, ‘একপে’ দেশব্যাপী জনগণকে একটি ‘ইন্টারঅপারেবল’ বিল পেমেন্টের সেবা প্রদান করছে। সেবাটি এজেন্টদের নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে অনলাইনে সহজলভ্য, বিস্বস্ত এবং নিরাপদ লেনদেন পদ্ধতি। 
এটুআই এর প্রকল্প বাস্তবায়নের ন্যাশনাল কনসালটেন্ট সাহাদাত হোসেন বলে, ‘একপে’ সেবা ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড, এমএফএস, ওয়ালেট, ই-ব্যাংকিং এবং মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল যে কোন জায়গা থেকে তাৎক্ষণিক প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। 
তিনি আরো বলেন, ‘একপে’ এর অধীনে ১৪ ধরনের বিল প্রদান ও ১৫ ধরনের ই-সার্ভিস সহ সর্বমোট ২৯ ধরনের সেবা দেওয়া হয়। 
পরিষেবাগুলি হল: ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো পোস্টপেইড), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি পোস্টপেইড), ঢাকা ওয়াসা, খুলনা ওয়াাসা, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ  টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেড, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল), ডিপিডিসি প্রিপেইড, ডেসকো প্রিপেইড, চট্টগ্রাম ওয়াসা, ই-পৌরসভা ব্যবস্থা, ই-পড়চা, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আমদানি অনুমতি (ডিএই), ডিএই- এর রিলিজ অর্ডার,  ডিএই- রেজিস্ট্রেশন (রপ্তানিকারক-আমদানিকারক), ডিএই-এর ফাইটো-স্যানিটারি সার্টিফিকেট, ডেসকো নতুন সংযোগ, ডেসকো সিকিউরিটি ডিপোজিট, ডেসকো লোড ক্লিয়ারেন্স ফি, ডিপিডিসি মিসএ্যালিয়েন্স ফি, মাই গভ, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক-ই-রেজিস্ট্রেশন), ডিজিটাল চাঁদপুর সিস্টেম, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং ডিএই-এর সেচের ফি।
এছাড়াও  নিম্নলিখিত প্রতিষ্ঠান এবং পরিষেবাগুলিকে ‘একপে’ প্ল্যাটফর্মে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। এগুলি হলো: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, প্রবাসী কল্যাণ (ফি সংগ্রহ), কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড, খনিজ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি), বেনাপোল (পোর্ট কিয়ারেন্স), সুন্দরবন গ্যাস, তিতাস গ্যাস, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ সড়ক ও পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি) এবং বাংলাদেশ ক্রিড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি), বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, নর্থ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো) এবং পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (পিজিসিএল)। 

আপনি কি মনে করেন?

0 টি পয়েন্ট
উপনোট ডাউনভোট

একটি মন্তব্য

জাপা মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর মৃত্যুতে স্পিকারের শোক

চট্টগ্রামে করোনায় ৩ জনের মৃত্যু