ভিতরে

ডেনমার্কের রূপকথার গল্প শেষ করে ফাইনালে ইংল্যান্ড

অতিরিক্ত সময়ের গোলে ডেনমার্ককে ২-১ গোলে পরাজিত করে ৫৫ বছর পর বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টের ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ইংল্যান্ড। ওয়েম্বলিতে বুধবার ৬৫ হাজার উচ্ছসিত সমর্থকের উপস্থিতিতে দারুন ছন্দময় ফুটবল উপহার দেয় উভয় দলই। 
মিকেল ডামসগার্ডের দুর্দান্ত ফ্রি-কিকে সেমিফাইনালে ৩০ মিনিটে এগিয়ে গিয়েছিল ড্যানিশরা। এই গোলের পর গ্যারেথ সাউথগেটের দলে আরো একবার সেমিফাইনাল থেকে হতাশাজনক বিদায়ের শঙ্কা দেখা দেয়। বিশ্বকাপে তিন বছর আগে শেষ চার থেকে বিদায়ের স্মৃতি এখনো ভুলতে পারেনি ইংলিশরা। কিন্তু আট মিনিট পর সিমন কায়েরার আত্মঘাতি গোলের পর হ্যারি কেনের অতিরিক্ত সময়ের পেনাল্টিতে ইংল্যান্ডের জয় নিশ্চিত হয়। ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা ড্যানিশ গোলরক্ষক কাসপার শিমিচেল কেনের পেনাল্টিটি রুখে দিলেও ফিরতি বলে কেনকে আর আটকানো যায়নি। আগামী রোববার ওয়েম্বলিতে প্রথমবারের মত ফাইনালে ওঠা ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ টুর্নামেন্টের আরেক ফেবারিট ইতালি। 
এই পরাজয়ের মাধ্যমে ডেনমার্কের রূপকথার গল্পটাও সেমিফাইনালে এসে শেষ হযে গেল। ইউরো ৯২ জেতার পর এই প্রথমবারের মত ড্যানিশদের সামনে সুযোগ এসেছিল আরো একটি ফাইনাল খেলার। তারকা মিডফিল্ডার ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনের মাঠের মধ্যেই হৃদরোগে আক্রান্ত হবার হতাশাজনক ঘটনা দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করা ডেনসরা এতদুর পর্যন্ত এসেছিল অনেকটাই সৌভাগ্যের জোড়ে। গ্রুপ বি’র দ্বিতীয় দল হিসেবে নক আউট পর্বে ওঠা, এরপর শেষ ১৬’তে ওয়েলসকে উড়িয়ে দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে চেক প্রজাতন্ত্রের বিপক্ষে কষ্টার্জিত জয় দিয়ে সেমিফাইনালে টিকিট পেয়েছিল ডেনমার্ক। সেমিফাইনালে পথে পুরো যাত্রাটাই যেন ডেনসরা খেলেছে  এরিকসেনের জন্য। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে দলের এই প্রাণভোমরা সব সময়ই সতীর্থদের অনুপ্রানীত করে গেছেন। কাসপার হুলমান্ডের দলের এই রূপকথা ইউরো ইতিহাসে সবসময়ই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। 
অন্যদিকে সাতটি ম্যাচের মধ্যে ছয়টি ম্যাচই ঘরের মাঠে খেলার পুরো সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে যোগ্য দল হিসেবেই ফাইনালের টিকিট পেয়েছে ইংল্যান্ড। নক আউট পর্বে অবশ্য ইংল্যান্ডকে আরো বেশী সতেজ দেখা গেছে। প্রায় দুই বছর পর কোন ক্রীড়া ইভেন্টে এত বেশী দর্শকের সমাগমকে দারুনভাবে উপভোগ করে সাউথগেট শিষ্যরা বাড়ি ফিরেছে। ১৯৬৬ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের একমাত্র শিরোপা পাবার পর এখন আবারো নিজেদের পরিচিত পরিবেশে প্রথমবারের মত ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের হাতছানি এখন ইংল্যান্ডের সামনে। নিজেদের মাঠ বলেই ইতালির বিপক্ষে কিছুটা হলেও ইংল্যান্ডকে এগিয়ে রাখা হচ্ছে। 
ম্যাচের শুরুতে ডেনমার্ক কিছুটা বিচলিত থাকলেও শিগগিরই তা কাটিয়ে ওঠে। পিয়েরে-এমিলে হোবার্গের শট সরাসরি ইংলিশ গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ডের হাতে ধরা পড়ে। মার্টিন ব্রেথওয়েইট ও ডামসগার্ডের প্রচেষ্টাগুলো অল্পের জন্য ব্যর্থ হয়। টানা সাত ম্যাচে কোন গোল হজম না ইংল্যান্ড অবশ্য ডেনমার্ককে আর প্রতিরোধ করতে পারেনি। ৩০ মিনিটে অসাধারণ এক ফ্রি-কিকে ইংলিশ দেয়ালের উপর দিযে ডামসগার্ডের শট উড়ে গিয়েও আটকাতে পারেনি পিকফোর্ড। টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মত পিছিয়ে পড়া ইংল্যান্ড অবশ্য গোল হজম করে মোটেই ছন্দ হারিয়ে ফেলেনি। বরং ম্যাচে ফিরে আসার জন্য একের পর এক আক্রমন চালিয়ে গেছে। তারই ধারাবাহিকতায় শিমিচেলকে একা পেয়েও পরাস্ত করতে পারেননি রাহিম স্টার্লিং। পরমুহূর্তেই কেনের বাড়ারো পাসে ডানদিক থেকে বুকায়োর সাকার পাসে স্টার্লিংয়েল পাশে থাকা কায়েরের স্পর্শ লেগে বল জালে জড়ালে ৩৯ মিনিটেই সমতায় ফিরে ইংল্যান্ড। 
বাকুতে চেক প্রজাতন্ত্রের সাথে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার পর প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে লন্ডনে আসা ডেনমার্কের জন্য দ্বিতীয়ার্ধটা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছিল। খেলোয়াড়দের মধ্যে পরিশ্রান্ত ভাব স্পষ্টভাবেই লক্ষ্য করা গেছে। ৯০ মিনিটের আগে হুলমান্ড তার কোটা পূরণ করে সবগুলো বদলী খেলোয়াড়ই মাঠে নামিয়ে ফেলেছিলেন। দলকে বাড়তি কিছুটা শক্তি যোগানোর তাগিদেই ড্যানিশ কোচ আর দেরী করেননি। ম্যাচটি অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় শুধুমাত্র শিমিচেলের কারনেই। হ্যারি ম্যাগুয়েরের লো হেড ও কেনের একটি প্রচেষ্টা রুখে দিয়ে তিনি ডেনমার্ককে রক্ষা করেছেন। 
অতিরিক্ত সময়েও ইংল্যান্ডের সামনে একমাত্র বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন শিমিচেল। ১০৪ মিনিটে স্টার্লিংকে ফাউলের অপরাধে জোয়কিম মাহেলের বিপক্ষে যে পেনাল্টিটি আদায় করে নিয়েছিল ইংল্যান্ড তা নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কা রয়েছে। স্পট কিক থেকে কেনের শটটি শিমিচেল রুখে দিলে ফিরতি বলে ইংলিশ অধিনায়ক আর ভুল করেননি। টুর্নামেন্টে এটি তার চতুর্থ গোল। ১০৫ মিনিটে জ্যাক গ্রীলিশ নামার পর ইংল্যান্ডের আক্রমনের ধার আরো বাড়তে থাকে। 
২৫ বছর আগে সর্বশেষ ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপে ইংল্যান্ড সেমিফাইনালে খেলেছিল। জার্মানীর বিপক্ষে ঐ ম্যাচে টাই ব্রেকারে বর্তমান কোচ সাউথগেটের পেনাল্টি মিসের কারনে বিদায় নিতে হয়েছিল ইংল্যান্ডকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার অধীনেই এখন ইংল্যান্ড প্রথমবারের মত ইউরোপীয়ান সর্বোচ্চ আসরে শিরোপা ঘরে তোলার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।

আপনি কি মনে করেন?

0 টি পয়েন্ট
উপনোট ডাউনভোট

একটি মন্তব্য

সারা বিশ্বে করোনা সংক্রমণ ৩ শতাংশ বেড়েছে : ডব্লিউএইচও

নয়্যারই থাকছেন বায়ার্নের অধিনায়ক