ভিতরে

এলডিসি পরবর্তী রপ্তানি সক্ষমতা অর্জনে সম্ভাবনাময় সকল শিল্পের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতের আহ্বান

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তোরণ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রপ্তানি বহুমুখীকরণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদী ঋণ ও তৈরি পোশাক খাতের ন্যায় রপ্তানিমুখী অন্যান্য শিল্পের জন্য সমান সুবিধা প্রদান, মানব সম্পদের উন্নয়ন, বিদ্যমান নীতিমালার দ্রুত সংষ্কার ও বাস্তবায়ন, আন্তর্জাতিক নেগোশিয়েশন দক্ষতা বাড়ানো এবং গবেষণা কার্যক্রমে বিনিয়োগ ও বরাদ্দ বৃদ্ধির মত বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বুধবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তোরণ পরবর্তী সময়ে রপ্তানী বহুমুখীকরণের চ্যালেঞ্জ ও করণীয় নির্ধারণ’ বিষয়ক ভার্চুয়াল ডায়ালগে আলোচকরা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন।
ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)’র সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর, সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী, লেদার গুডস্ অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফেকচার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)’র সম্মানিত ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রি অনার্স এসোসিয়েশনের (বিইআইওএ) সভাপতি মো. আব্দুর রাজ্জাক, এসিআই মবিলিটি, প্লাস্টিক অ্যান্ড এগ্রিবিজনেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও ড. এফ এইচ আনসারী, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের জেনারেল ম্যানেজার নাইমুল হুদা প্রমূখ আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন।
ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ ২০২৬ সাল পরবর্তী সময়ে রপ্তানির ক্ষেত্রে বাণিজ্য ও স্বল্প ব্যয়ে ঋণ সুবিধাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহায়তা সুবিধা হারাবে। পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে শুল্ক-অশুল্ক বাঁধার সম্মুখীন হতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ১৭৫০টি রপ্তানী পণ্যের ৮১ শতাংশ পোশাক খাত থেকে আসে। এলডিসি উত্তোরণ পরবর্তী সময়ে পোশাক খাতসহ অন্যান্য মাঝারী ও ছোট শিল্প যেমন পাট, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা, ফার্মাসিটিক্যাল, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আইসিটিসহ অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতের রপ্তানির বাজার ধরে রাখতে ও বাজারে বৈচিত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
রিজওয়ান রাহমান মনে করেন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি, পণ্যের গুণমান, মূল্য ও ভোক্তার আচরণ পরিবর্তনসহ গবেষণা ও উদ্ভাবনের ব্যয়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশকে সতর্ক হতে হবে। ২০২৬ পরবর্তী সময়ে দেশের রপ্তানিখাতের লাইফলাইন সমুন্নত রাখার জন্য সম্ভাব্য রপ্তানিমুখী শিল্প ও সম্ভাবনাময় খাতের চ্যালেঞ্জসমূহ সনাক্ত করে তার থেকে উত্তোরণের কৌশলগত সুপারিশমালা নির্ধারনের উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।  
অনুষ্ঠানে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বাজার মূলত ইউরোপ ও আমেরিকা ভিত্তিক। তবে সময় এসেছে বর্তমান বাজারের বাইরে বিশেষ করে আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাজার সম্প্রসারণে মনোযোগী হওয়া এবং পণ্যের পাশাপাশি সেবা রপ্তানির বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জনকে প্রাধান্য দেওয়া জরুরী বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। সেই সাথে তৈরি পোশাকখাতের ন্যায় অন্যান্য রপ্তানীমুখী খাতে বন্ডসহ অন্যান্য সুবিধা প্রদানের বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করারও আহ্বান জানান।
ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, পণ্য প্রমোশনের জন্য উদ্যোক্তোদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি বলেন, এফটিএ ও পিটিএ স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র রাজস্ব আহরণের বিষয়টি বেশি মাত্রায় প্রাধান্য না দিয়ে এ ধরনের চুক্তির মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষন করা সম্ভব হলে রাজস্ব আহরণ আরও বাড়বে।
সিপিডির সম্মানিত ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,আমাদের  দেশিয় আইন ও নীতিমালাগুলোকে ডব্লিউটিও সুপারিশের আলোকে সংশোধন এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন খুবই জরুরী। তিনি বলেন, সেক্টর ভিত্তিক চাহিদাগুলোকে মাথায় নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে পাশাপাশি বিএসটিআইসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন হয়ে গেলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে, তা যেমন সত্য, সেই সাথে শিল্প-কারখানাগুলোতে কাজ করার জন্য দেশীয় মানবস ম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন করা না হলে, বিদেশি নাগরিকরা এখানে আসবে এবং বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা নিজ দেশে নিয়ে যাবে, তাই আমাদের নিজস্ব মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন খুবই জরুরী। পাশাপাশি তিনি সহযোগী দেশগুলোর সাথে এফটিএ ও পিটিএ স্মারক স্বাক্ষরে আরো গতি আনায়নের উপর গুরুত্বাারোপ করেন এবং এ বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম বাড়ানোর আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, তথ্য-প্রযুক্তিখাতে রপ্তানির যেসব তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইপিবি হতে প্রদান করা হয়, সেখানে বেশকিছু গরমিল রয়েছে কারণ হিসেবে, তিনি এখাতে বিদেশ হতে টাকা আনতে নীতিগত প্রতিবন্ধকতা বেশ প্রকট। তাই তিনি ‘আইপি ভ্যালু গাইডলাইন’ প্রণয়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান।
বেসিস সভাপতি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার চার্জ কমানোর প্রস্তাব করেন এবং একই সাথে মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন।
মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়ন হলে আমাদের নেগোশিয়েশন ক্ষমতা বাড়বে, একই সাথে এর ফলে বাংলাদেশ যে সব সুযোগ হারাবে তা মোকাবেলায় সরকারী এবং বেসরকারীখাতকে পার্টনার হিসেবে কাজ করতে হবে। তিনি  মনে করেন, পণ্য উৎপাদন ব্যয় কামাতে জ¦ালানির দক্ষ ব্যবহার, বেকওয়ার্ড লিংকেজ খাতগুলোকে আরো সক্ষমতা বাড়ানো, সকল রপ্তানিমুখী পণ্যের জন্য একই নীতি সহায়তা প্রদান খুবই জরুরি।

আপনি কি মনে করেন?

0 টি পয়েন্ট
উপনোট ডাউনভোট

একটি মন্তব্য

বেজায় নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করলেন ইউসুফ হারুন

তিন দিনে প্রায় ১২ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করেছে টিসিবি