ভিতরে

কিছু দলের জন্য ঘরের মাঠের সুবিধা নিয়ে সমালোচনা

ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের এবারের আসরে মাঠের লড়াইয়ে নাটকীয়তা কম হয়নি। কিন্তু মাঠের বাইরেও এই আসর নিয়ে নাটকীয়তার ইঙ্গিত ৯ বছর আগেই পাওয়া গিয়েছিল যখন ততকালীন উয়েফা সভাপতি মিশেল প্লাতিনি ঘোষনা দিয়েছিলেন ২০২০ সালের টুর্ণামেন্টটি সারা ইউরোপ জুড়ে তিনি আয়োজন করতে চান। তখন থেকেই অনেকে বিষয়টি নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করেছে এবং এখনো তা চলছে। বিশেষ করে ঘরের মাঠের সুবিধা গুটিকতক দল কাজে লাগিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে যা কোনভাবেই কাম্য নয়।
এবারের টুর্নামেন্টটি প্লাতিনির পরিকল্পনা অনুযায়ী ইউরোপের ১১টি শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। যদিও তখন করোনার ভয়াল থাবা বিশ্বের উপর পড়েনি। বৈশ্বিক এই মহামারীর কারনে এক বছর পিছিয়ে টুর্নামেন্টটি আয়োজিত হচ্ছে। 
যদিও এখনো পর্যন্ত অনেক দিক থেকেই এবারের এই আসর আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে। ১৯৭৬ সালের পর গড়ে প্রতিটি ম্যাচে সর্বাধিক গোল হয়েছে এবার। করোনা মহামারীর কারনে অনেক বিধিনিষেধ যেমন মানতে হয়েছে তেমন টুর্নামেন্টটিকে সফল করতে উয়েফার আগ্রহের কমতি ছিলনা। ঘরের মাঠের সুবিধা কেউ না কেউ পাবে, এটা মেনে নিয়েই দলগুলো অংশগ্রহণ করে। তার ফলও হাতেনাতেই পেয়েছে স্বাগতিকরা। টুর্নামেন্টে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা ৯টি স্বাগতিক দেশের চারটি দলই শেষ চারের টিকিট পেয়েছে। যে কারনে ফাইনালেও যেকোন দুটি স্বাগতিক দলই খেলার সুযোগ পাচ্ছে। 
শেষ চারে ওঠা ইংল্যান্ড, স্পেন, ডেনমার্ক ও ইতালি তাদের গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলো নিজেদের মাঠে খেলেছে। তাদের বিপক্ষে খেলতে অন্য দলগুলোর হাজার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে মাঠে নামতে হয়েছে। আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে ওয়েলস তাদের প্রথম দুটি ম্যাচ খেলেছে। এরপর প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ইতালির বিপক্ষে খেলতে রোমে গেছে। ২০১৬ সালের সেমিফাইনালে খেলা পরিশ্রান্ত এই দলটি নক আউট পর্বে ডেনমার্কের কাছে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে বিদায় নেয়। ডেনমার্ক তাদের গ্রুপ পর্বের তিনটি ম্যাচই কোপেনহেগেনে খেলার পর এ্যামাস্টারডামে শেষ ১৬’র ম্যাচ খেলেছে। 
ভ্রমনজনিত বিধিনিষেধ থাকার কারনে ওয়েলসের সমর্থকরা শেষ ১৬’র ম্যাচ দেখতে এ্যামাস্টারডামে যেতে পারেনি। যে কারনে ডেনস সমর্থকরা পুরো মাঠে দাপট দেখিয়েছে। 
প্রায় একই ধরনের ব্যস্ত সূচীতে খেলার পরও কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে সুইজারল্যান্ড। ভøাদিমিরি পেটকোভিচের দল বাকুতে ওয়েলসের বিপক্ষে ইউরো অভিযান শুরু করার পর রোম সফরে যায়, এরপর নক আউট ম্যাচ খেলতে আজারবাইজানে উড়ে যায়। কিন্তু তারপরেও তারা শেষ ১৬‘র লড়াইয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে বিদায় করতে সক্ষম হয়। ফ্রান্স তাদের গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলো খেলেছে মিউনিখ ও বুদাপেস্টে। বুখারেস্টে শেষ ১৬’র ম্যাচে তারা পেনাল্টিতে সুইসদের কাছে পরাজিত হয়। সেন্ট পিটার্সবার্গে কোয়ার্টার ফাইনালে পেনাল্টিতে সুইজারল্যান্ড স্পেনের বিপক্ষে আর পেরে উঠেনি। 
গ্রুপ পর্ব শেষে সুইস কোচ পেটকোভিচ বলেছিলেন, ‘আগামীকাল চতুর্থবারের মত আমরা টাইম জোন পরিবর্তন করতে যাচ্ছি। এটা একটি দলের প্রস্তুতির জন্য খুব একটা সুখকর নয়। আমরা অনেক বেশী যাতায়াত করেছি। একেকটি জায়গায় গিয়ে আমাদের সেখানকার পরিবেশ ও সময়ের সাথে মানিয়ে নিতে হয়েছে যা খেলোয়াড়দের উপর প্রভাব পড়েছে। তারপরেও এতদুর আসার জন্য আমি খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানাতে চাই।’
স্বাগতিক দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশী সুবিধা পেয়েছে ইংল্যান্ড। শনিবার রোমের স্তাদিও অলিম্পিকোর কোয়ার্টার ফাইনালে ইউক্রেনের বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয়ের ম্যাচের আগ পর্যন্ত ইংল্যান্ড তাদের সবগুলো ম্যাচই ওয়েম্বলিতে খেলেছে। লন্ডনের এই ঐতিহ্যবাহী স্টেডিয়ামেই অনুষ্ঠিত হবে টুর্নামেন্টের দুটি সেমিফাইনাল ও ফাইনাল। যে কারনে ডেনমার্কের বিপক্ষে শেষ চারেও অনেকটাই এগিয়ে থাকবে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। এই ম্যাচে জিততে পারলে ইংল্যান্ড এবারের টুর্নামেন্টের সম্ভাব্য সাতটি ম্যাচের মধ্যে ছয়টিই খেলবে ঘরের মাঠে। 
বেলজিয়ামের কোচ রবার্তো মার্টিনেজ বলেছেন, ‘আমার কাছে এখনো ইংল্যান্ডই ফেবারিট। তারা প্রতিটি ম্যাচই নিজেদের মাঠে খেলেছে। নক আউট পর্বে যখন দলগুলো বেশ চাপের মধ্যে থাকে তখন ঘরের মাঠের সুবিধা অনেক বেশী কাজে আসে।‘
১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মত ঘরের মাঠে ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপ আয়োজনের পর এই প্রথম সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে ইংল্যান্ড। ১৯৬৬ সালে ওয়েম্বলিতে বিশ্বকাপের একমাত্র শিরোপা জেতা দলটি এখনো বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। 
ঐতিহ্য অনুযায়ী সাধারণত একটি বা দুটি দেশে বড় টুর্নামেন্টগুলো আয়োজিত হয়ে থাকে। আর স্বাগতিক হিসেবে ঐ একটি বা দুটি দেশ কিছুটা হলেও সুবিধা পায়। কিন্তু ইউরোর অতীত ইতিহাসে দেখা যায় ১৯৮৪ সালে স্বাগতিক হিসেবে সর্বশেষ ফ্রান্স শিরোপা জয় করেছিল। এবারের আসরের ভিন্নতা হচ্ছে করোনাভাইরাসের কারনে বিভিন্ন বিধিনিষেধ মানতে গিয়ে এমনিতেই দলগুলোর অবস্থা নাজুক, তার উপর বিভিন্ন দেশে যাতায়াতের কারনে পরিশ্রান্ত দলগুলো আর সামনে এগিয়ে যেতে পারেনি, সমর্থকরাও এখানে বড় একটি নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। 
ক্রোয়েশিয়ান ম্যানেজার জøাটকো ডালিচ বলেছেন, ‘সমর্থকদের ছাড়া আমরা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। কারন তাদের নিয়েই আমরা খেলতে অভ্যস্ত। এটা সত্যিই মেনে নেয়া যায়না। আমাদের ভ্রমনও করতে হয়েছে , আবার জৈব সুরক্ষা বলয়ও মানতে হয়েছে।‘
যদিও এবারই প্রথমবারের মত এতগুলো শহরে আয়োজিত হবার পর আগামী ২০২৪ সালে আবারো এক শহরে ফিরছে ইউরোপীয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ এই আসর। ২০২৪ সালের ইউরো আয়োজিত হবে জার্মানীতে। পশ্চিম জার্মানীতে সর্বশেষ ১৯৮৮ সালে বসেছিল ইউরো চ্যাম্পিয়শীপ।

আপনি কি মনে করেন?

0 টি পয়েন্ট
উপনোট ডাউনভোট

একটি মন্তব্য

ব্যাংককে কারখানায় বিস্ফোরণে নিহত ১, আহত ২৭

ক্রিস্টাল প্যালেসের কোচ হিসেবে নিয়োগ পেলেন প্যাট্রিক ভিয়েরা