ভিতরে

জার্মানীকে হতাশ করে শেষ আটে ইংল্যান্ড

দ্বিতীয়ার্ধে  রাহিম স্ট্রার্লিং ও হ্যারি কেনের দুই গোলে হাই ভোল্টেজ ম্যাচে জার্মানীকে ২-০ ব্যবধানে পরাজিত করে ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ইংল্যান্ড। 
লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ম্যাচ শেষের ১৫ মিনিট আগে স্টার্লিংয়ের গোলে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। এরপর ৮৬ মিনিটে অধিনায়ক কেনের গোলে ইংলিশদের জয় নিশ্চিত হয়। ১৯৬৬ সালের পর বড় কোন টুর্নামেন্টে এই প্রথম জার্মানীকে পরাজিত করতে সফল হলো ইংল্যান্ড। ৫৫ বছর আগে বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানদের পরাস্ত করে একমাত্র শিরোপাটি জিতেছিল ইংলিশরা। 
এরপর ১৯৭০, ১৯৯০ ও ২০১০ সালে এই জার্মানদের কাছেই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিদায় ঘন্টা বেজেছে। এছাড়া ইউরো ৯৬‘র সেমিফাইনালে এই ওয়েম্বলিতেই জার্মানদের কাছে পরাজিত হয়ে হতাশ হতে হয়েছিল। 
কিন্তু শেষ পর্যন্ত গ্যারেথ সাউথগেটের দল সবকিছু প্রতিশোধ যেন একদিনেই নিয়ে নিল। ২৫ বছর আগের সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে সাউথগেটের পেনাল্টি মিসে ইংল্যান্ডের ফাইনালে যাওয়া হয়নি। 
কিন্তু কাল সবদিক থেকেই ইংল্যান্ড এগিয়ে ছিল। আর সেটা পূর্ণতা পেয়েছে স্টার্লিংয়ের দুর্দান্ত ফিনিশিং ও শেষ পর্যন্ত কেনের গোলখরা কাটানোর মাধ্যমে। এনিয়ে টুর্নামেন্টের তিনটি গোল করলেন স্টার্লিং, আর কেনের এটাই প্রথম গোল। এখনো পর্যন্ত টুর্নামেন্টে কোন গোল হজম করেনি সাউথগেটের শিষ্যরা। শনিবার রোমে কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ইউক্রেন। 
১৯৬৬ সালের পর প্রথম বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টে শিরোপা জয়ের স্বপ্নে খেলতে নামা ইংল্যান্ডের জন্য এখন ফাইনালে খেলা অনেকটাই উন্মুক্ত হয়ে গেছে। কোয়ার্টারের বাঁধা পেরুতে পারলেও সেমিফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ডেনমার্ক বনাম চেক প্রজাতন্ত্রের মধ্যে বিজয়ী দল। 
ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপের ইতিহাসে নক আউট পর্বে এ নিয়ে মাত্র দ্বিতীয়বারের মত জিততে সক্ষম হলো ইংল্যান্ড। ১৯৭৫ সালে ওয়েম্বলিতে জার্মানীর বিপক্ষে প্রথম জয়ের পর ঘরের মাঠে এটা তাদের নক আউট পর্বে দ্বিতীয় জয়। 
এ দিকে জার্মান ম্যানেজার জোয়াচিম লো‘কে তার শিষ্যরা হাসিমুখে বিদায় জানাতে পারলোনা। টুর্ণামেন্টের পর বিদায়ের ঘোষনা আগেই দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু সেটা একটু তাড়াতাড়িই হয়ে গেল। জার্মান জাতীয় দলের সাথে ১৫ বছরের সম্পর্কটা কাল পরাজয়ের মাধ্যমে শেষ হলো।  
জার্মানীর শক্তিশালী আক্রমনভাগের বিপরীতে নিজেদের মানিয়ে নিতে রক্ষনভাগে তিনজন স্বীকৃত ডিফেন্ডরাকে নিয়েই মূল একাদশ সাজিয়েছিলেন সাউথগেট। আর তার এই সিদ্ধান্তই শেষ পর্যন্ত সফলতা এনে দিয়েছে। ওয়েম্বলিতে উপস্থিত ৪০ হাজার দর্শকের মধ্যে স্বাভাবিক ভাবেই ইংলিশদের আধিক্য ছিল। করোনার কারনে দীর্ঘদিন পর সমর্থকদের পূর্ণ আবহ দারুনভাবে উপভোগ করেছে স্বাগতিকরা। সেই ধারাবাহিকতায় হয়ত প্রথম থেকেই তারা সাবেক বিশ্ব ও ইউরো চ্যাম্পিয়নদের উপর আধিপত্য দেখিয়েছে। পজিশনের দিক থেকে অবশ্য জার্মানরাই এগিয়ে ছিল। তবে প্রথম ভাল কোন সুযোগ ইংল্যান্ডই তৈরী করেছিল। ২৫ গজ দুর থেকে স্টার্লিংয়ের শক্তিশালী শট দারুন দক্ষতায় রুখে দেন ম্যানুয়েল ন্যয়ার। হ্যারি ম্যাগুয়েরের বেশ কয়েকটি হেড ও ট্যাকেল এবং বুকায়ো সাকার ডান দিক দিয়ে বারবার বিপদজনক হয়ে ওঠা, এসবই ইংল্যান্ডকে ধীরে ধীরে ম্যাচের নিয়ন্ত্রন এনে দেয়। যদিও জার্মানীও মাঝে মাঝে আক্রমন চালিয়েছে। কেই হাভার্টজের দারুন এক পাসে ডি বক্সের মধ্য থেকেও টিমো ওয়ার্নার সফল হতে পারেননি। চেলসির হয়ে আক্রমনভাগে ব্যর্থতার একটি মৌসুম কাটানো ওয়ার্নারের শট সহজেই তালুবন্দি করেন ইংলিশ গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড। প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে থমাস মুলারের একটি ভুল পাস থেকে স্টার্লিং বল পেয়ে তা কেনের দিকে বাড়িয়ে দিলে ভাল ফিনিশিংয়ের অভাবে দলকে এগিয়ে দিতে পারেননি ইংলিশ অধিনায়ক। 
বিরতির পরপরই হাভার্টজের হাফ-ভলি পিকফোর্ড দারুনভাবে কর্ণারের মাধ্যমে রক্ষা করেন। ৬৯ মিনিটে সাকার পরিবর্তে জ্যাক গ্রীলিশ নামার পরেই ইংলিশ শিবির চাঙ্গা হয়ে ওঠে। তারই ধারাবাহিকতায় ৭৫ মিনিটে প্রথম গোল উপহার পায় ওয়েম্বলির দর্শকরা। গ্রীলিশের কাছ থেকে লুক শয়ের ক্রসে ম্যানচেস্টার সিটি তারকা স্টার্লিং পোস্টের খুব কাছে থেকে বল জালে জড়ালে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। হাভার্টজের বাড়ানো দারুন একটি পাস থেকে বায়ার্ন মিউনেখর অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার থমাস মুলার যেভাবে বলটি মিস করেছেন তা নিয়ে পুরো জার্মান শিবির হতাশায় ভেঙ্গে পড়ে। ৮৬ মিনিটে কাউন্টার এ্যাটাক থেকে গ্রীলিশের হেডে দারুন এক হেডে কেন নয়্যারকে পরাস্ত করলে ইংল্যান্ডের জয় নিশ্চিত হয়।

আপনি কি মনে করেন?

0 টি পয়েন্ট
উপনোট ডাউনভোট

একটি মন্তব্য

কোপা আমেরিকায় ফেবারিট ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার বাধা উরুগুয়ে

অতিরিক্ত সময়ের গোলে সুইডেনকে পরাজিত করে শেষ আটে ইউক্রেন