ভিতরে

ইন্টারনেট ব্যবহারে বদলে গেছে পাহাড়ের দৃশ্যপট

॥ সৈকত দাশ ॥
বান্দরবান, ২৯ জুন, ২০১১ : চংরেং ¤্রাে, বয়স ৩২, চিম্বুকের ওয়াইজংশনের ৯ মাইল এলাকায় রয়েছে ১০ একর আয়তনের আম বাগান। বাগানে গাছ আছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০টি। এখানে তিনি চাষ করেছেন কিউযাই, রাংগোয়া, রেডকুইনসহ বিভিন্ন জাতের আম। সকাল হলেই নিজ বাগান পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
ফল কিংবা পাতায় কোন রোগ দেখা দিলেই ব্যবহার করেন কৃষকের জানালা। সেই অ্যাপে প্রতিকার ও প্রতিরোধের বিষয়ে জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন। চিংরেং ব্যবহার করেন কৃষি অ্যাপ আবহাওয়া বার্তা । পাহাড়ের তাপমাত্রা কেমন, বৃষ্টি হবে কিনা, হলেও কত মিলি মিটার হতে পারে সেই সব বিষয়ে আগে থেকে ধারণা নেন তিনি। সেই ধারণা থেকে তিনি বাগানে শ্রমিক দেয়া, গাছের পরিচর্যা, বালাইনাশক ছিটনোর মত সিদ্ধান্ত আগে থেকেই নিতে পারেন।
চংরেং বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে কৃষি অ্যাপ বিষয়ক হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এখন ফসলের সমস্যা দেখা দিলেই অ্যাপের সাহায্য নিই। ইন্টারনেট না থাকলেও অফলাইনে এসব অ্যাপ ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও ফেসবুক ব্যবহার করে মেসেঞ্জারের মাধ্যমে সরাসরি কৃষি কর্মকর্তাদের থেকে পরামর্শ নিতে পারি। ইন্টারনেট আমাদের অনেক উপকারে এসেছে।
তিনি আরো বলেন, ইন্টারনেট না থাকায় আগে চাষাবাদ সম্পর্কে ধারণা ছিল না, বালাইনাশক, গাছের চারা রোপণ এসব বিষয়ে কিছুই জানতাম না। এতে ফসলের সাথে সাথে আমার অনেক বেশি আর্থিক ক্ষতি হত। এখন ইউটিউব দেখে বিভিন্ন দেশের কৃষি সম্পর্কে জানতে পারি। এছাড়াও, আম গাছের পরিচর্যা কীভাবে করতে হয় তা লিখে গুগল কিংবা ইউটিউবে সার্চ দিলেই ওই সম্পর্কিত অসংখ্য ভিডিও চলে আসে। এর মধ্যে কয়েকটি দেখি, শিখি এবং ফসলের মাঠে প্রয়োগ করি। আর কৃষি অ্যাপগুলোতো আছেই ।
শুধু চিংরাই নন। জেলার সদর উপজেলার গোয়ালিয়া খোলার কৃষক ফোরকান উদ্দিনও সরকারি কৃষি অ্যাপ ব্যবহার করেন। তিনি দু’একর জমির পুরোটাতেই বারো মাসি সবজি চাষ করেন। আগেই কৃষি অফিস থেকে নিয়েছেন কৃষি অ্যাপ বিষয়ক প্রশিক্ষণ। এখন শাক সবজির কোন রোগ দেখা দিলেই সাথে সাথে কৃষির মোবাইল অ্যাপ দেখেন। তিনি জানান, কৃষি বিভাগ থেকে প্রযুক্তি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। আমার আশে পাশের কৃষকদেরও আমি কৃষি অ্যাপ ব্যবহার করার জন্য বলি। এটার উপকার বলে শেষ করা যাবে না। আগের মত সবজি চাষে আর ক্ষতি হয় না। কখন, কোন সময়, কি ব্যবহার করতে হবে, কিংবা কোন চারা লাগাতে হবে সেটি সহজেই গুগল ঘেটে জানা যায়।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে উঠান বৈঠক করেন। বৈঠকে সমসাময়িক কৃষি অ্যাপের ব্যবহার, সার ব্যবস্থাপনা, আন্তঃপরিচর্যা, আধুনিক জাত সম্পর্কে ধারণা, কৃষি পুর্ণবাসন ও প্রণোদনা, মার্কেট লিংকেজ সম্পর্কে কৃষকদের ধারণা দেন।  
সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক জানান, পাহাড়ের ইন্টারনেট ব্যবস্থা আমাদের বদলে দিয়েছে। এখন আমাদের ফেসবুকে অফিসিয়াল গ্রুপ পেজ আছে। ওই গ্রুপের মধ্যে কৃষি বিষয়ক চিঠি, তথ্য নিজেদের মধ্যে আদান প্রদান করি। এছাড়াও কর্মকর্তারা নির্দিষ্ট ফিল্ডে যাচ্ছে কিনা তা সহজেই যাচাই করতে পারি।
তিনি আরো বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে সময়, খরচ অনেক সাশ্রয় হচ্ছে। আর কৃষক পাচ্ছে দ্রুত সেবা। আর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমরা অফিসে বসেই কৃষককে সরাসরি নির্দেশনা দিতে পারি। এতে কৃষককে টাকা আর সময় ব্যয় করে অফিসে আসতে হয় না। মাঠ কিংবা ঘরে বসে সহজেই কৃষি বিষয়ক পরামর্শ নিতে পারেন। এখন পাহাড়ের ফল তেমন নষ্ট হয় না। কৃষকেরা সরাসরি ব্যবসায়ীদের সাথে মোবাইল কল কিংবা ইন্টারনেট কল করে দরকষাকষির মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করতে পারেন, ফলে, মধ্যসত্ত্বভোগীর  দৌরাত্ব ও কমছে ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. এ কে এম নাজমুল হক জানান, সব এসও’র কাছে একটি করে ট্যাব আছে।  তারা এই ট্যাবের মাধ্যমে কৃষকের বিভিন্ন সমস্যা ছবি তুলে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিতে পারেন। আমরা ছবি দেখে সেই প্রবলেমটা জেনে সমাধান দিতে পারছি। এছাড়াও, ওয়েদার ফোরকাস্টিং-এর ক্ষেত্রে এসওদের কাছ থেকে কৃষকরা জেনে নিতে পারছে। তবে, পাহাড়ের অনেক জায়গায় এখনও নেট সমস্যা আছে ।
তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগের অন্যতম। এর ফলে, দেশে তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ইন্টারনেট সংযোগ সারাদেশে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে দিয়েছে। পরিবর্তন এসেছে জেলার সকল স্তরে। পাহাড়ের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও এসেছে বড় পরিবর্তন। করোনার এ মহামারীর সময়ে শিক্ষকরা অনলাইনের মাধ্যমে পাঠদান করছেন। ভার্চুয়াল মিটিং করছেন স্বাস্থ্যবিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
জেলা সিভিল সার্জন ডা: অংসুই প্রু বলেন, ইন্টানেটের মাধ্যমে আমরা টেলিমেডিসিন সেবা দিচ্ছি। স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ এখন অনলাইনে করছি। সকল রিপোর্টিং কার্যক্রম এখন অনলাইনে করা হচ্ছে । মোবাইলের মাধ্যমে যে কোন প্রকার রোগের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে খুব কম সময়ে জানতে পারি। এছাড়াও অডিও এবং ভিডিও কলের মাধ্যমে এখন আমরা রেফার রোগী ট্র্যাক করতে পারি ।

আপনি কি মনে করেন?

0 টি পয়েন্ট
উপনোট ডাউনভোট

একটি মন্তব্য

ফ্রিল্যান্সিংয়ে কোটিপতি : তরুণদের স্বপ্ন দেখালো বরগুনার নাদিম

অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার বিলম্বিত ডোজ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে : জরিপ