ভিতরে

তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে বদলে গেছে ঢাকা রেঞ্জের সব থানার দৃশ্যপট

॥ রুপোকুর রহমান ॥
তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন আর মনিটরিং সিষ্টেমে পাল্টে গেছে ঢাকা রেঞ্জের আওতাভুক্ত থানাগুলোর সার্বিক চিত্র। বদলে গেছে থানার সেই চিরচেনা রূপ। ভূক্তভোগী সেবা প্রত্যাশীদের থানায় ভোগান্তি সম্পর্কিত পুরোনো ধারনার যায়গায় তৈরি হয়েছে স্বস্তি। থানার এমন পরিবর্তিত কর্ম পরিচালনা ও সেবায় খুশি সেবা নিতে আসা মানুষ।
যুগ যুগ ধরে সাধারণ মানুষের মনে থানা পুলিশ সম্পর্কে  যে নেতিবাচক ধারনা তৈরি হয়েছে সেই ধারনা বদলে দিতেই যেন উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা রেঞ্জ পুলিশ। দূর্নীতি ও হয়রানীমূক্ত নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে ঢাকা রেঞ্জের ১৩ জেলার ৯৬ থানায় স্থাপন করা হয়েছে সিসি টিভি অর্থাৎ কেøাজ সার্কিট ক্যামেরা। ২৪ ঘন্টাই একযোগে এক মনিটরের মাধ্যমেই পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এসব থানা। শুধু তাই নয়, বিচ্যুতি কিংবা অনিয়ম ধরা পরলে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থাও।   
ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার রোয়াইল ইউনিয়নের মৃত হোসেন আলীর ছেলে পঞ্চাশোর্ধ আজাদ হোসেন। জমি-জমা সংক্রান্ত ঘটনায় উপজেলার ধামরাই থানায় আসেন সাধারণ ডাইরী করতে। থানায় এসে সেবা প্রত্যাশী এই কৃষকের পুরো ধারনাই পাল্টে যায়। কর্তব্যরত ডিউটি অফিসারের ব্যবহারে তিনি তো হতবাক। নেই আগের মতো কোন হুমকি-ধামকি। নেই আর্থিক লেনদেনের বিষয়ও। বরং ডিউটি অফিসারের কক্ষে মনিটরিং করা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার কথা উল্লেখ করে কালক্ষেপন না করে দ্রুত জিডি এন্ট্রি করে হাসি মুখে বিদায় দেওয়া হয় তাকে। কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই  সেবা প্রত্যাশী আজাদ হোসেন তার কাঙ্খিত সাধারন ডাইরীটি নথিভূক্ত করে থানা কম্পাউন্ড থেকে স্বাচ্ছন্দ্যে বেরিয়ে আসেন।
বাসসের সাথে আলাপকালে আজাদ হোসেন জানান,  এ ঘটনায় থানা-পুলিশ সম্পর্কে দীর্ঘদিনের যে ভীতি  তৈরি হয়েছিলো তা একেবারেই বদলে গেছে। আজাদ হোসেন পুলিশের কাছ থেকে তার কাঙ্খিত এ সেবা পেয়ে যারপরনাই খুশি।
সাভার পৌর এলাকার ভাগলপুর টেইকাপাড়ার বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ আজিবর রহমান। থানা-পুলিশ সম্পর্কে তার পুরোনো ধারনাও পাল্টে গেছে অনেকাংশে। পেশায় পরিবহন ব্যবসায়ী আজিবর রহমান বলেন, “আমার একটি অটোরিক্সা চুরি যাওয়ার পর আমি থানায় যাই অভিযোগ দায়ের করতে। থানায় গিয়ে কোন আর্থিক লেনদেন কিংবা ঝামেলা ছাড়াই খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমি আমার অভিযোগ দায়ের করে ফিরে আসি।”
শুধু ধামরাইয়ের আজাদ হোসেন কিংবা সাভারের আজিবরই নন, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে ঢাকা রেঞ্জের আওতাধীন ১৩ জেলার ৯৬ থানা এলাকায় এরকম শতশত সাধারণ মানুষের মধ্যে থানা-পুলিশ সম্পর্কে চিরায়ত মনোভাব বদলে তৈরী হচ্ছে ইতিবাচক মনোভাব। যা পুরো দৃশ্যপটকেই পাল্টে দিয়েছে।  
ঢাকা রেঞ্জ পুলিশ সূত্র জানায়, ঢাকা রেঞ্জের আওতাধীন থানাগুলোতে তথ্য প্রযুক্তির সমন্বয়ে অডিও ভিডিও সাপোর্টেবল এসব কেøাজ সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে অনিয়ম বিচ্যুতি ধরা পরলে সাথে সাথেই থানায় কর্তব্যরত অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের সাথে কথা বলেন ডিআইজি কার্যালয়ে মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা। পরবর্তীতে সেবা প্রত্যাশীর সাথে কথা বলে জানতে চাওয়া হয় থানা কম্পাউন্ডে তার অভিজ্ঞতার কথা। সেবা প্রত্যাশী আর থানার ডিউটি অফিসারের বক্তব্য ক্রস টেষ্ট কিংবা বিশ্লেষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হয় । এভাবেই ডিআইজি কার্যালয়ের একটি মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ঢাকা রেঞ্জের সেগুনবাগিচা কার্যালয় থেকে ৯৬ থানার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যরা।
থানায় থাকা সেন্ট্রি, ডিউটি অফিসার আর হাজতখানার তদারকিতে ৩টি করে মোট ২৮৮টি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। যা ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে আশেপাশের দৃশ্যও দেখা যায়। এতে পুরো থানার সার্বিক আর স্পর্শকাতর বিষয়গুলোও ফুটে উঠে ক্যামেরার মাধ্যমে। এখানে মনিটরিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ৮জন পুলিশ কর্মকর্তাকে শিফট ওয়াইজ ডিউটি করতে হয়। চাকুরীর মেয়াদও দীর্ঘস্থায়ী নয় এসব কর্মকর্তাদের। স্বচ্ছতা নিশ্চিতে ৩ থেকে ৪ মাস পরপরই এদের বদলি করা হয়।
রেঞ্জভুক্ত থানাগুলোকে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন) নূরে আলম মিনা বলেন, মনিটরিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা থানায় আসা ভূক্তভোগী সেবা প্রত্যাশীদের ফোন করে কাঙ্খিত সেবা পাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চান। অন্যদিকে আমাদের ভিডিও রেকর্ডিংগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হয়। এদুটো মিলিয়ে কারও বিরুদ্ধে যদি কোন ধরনের গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে স্বচ্ছ থানাগুলোর পুলিশ সুপারদের কাছে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ উপস্থাপনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে।
ঢাকা রেঞ্জ পুলিশ দফতর সূত্র জানায়, ২০২০ এর ২ ডিসেম্বর থেকে জনবান্ধব পুলিশিং সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে রেঞ্জের ৯৬ থানাকে আধুনিকায়ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়।   থানাগুলো মনিটরিংয়ের দায়িত্বে আছেন ১জন ইন্সপেক্টর এবং ৭জন উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই)। এদের কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কিংবা সহকারী পুলিশ সুপার দায়িত্ব পালন করেন। সার্বিক তদারকির দায়িত্বে আছেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এবং অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন)। গেলো ৬ মাসে ৯৬ টি থানার ৩৯১ টি ত্রুটি বিচ্যুতি চিহ্নিত হয়েছে। যার মধ্যে ১১৪টি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগে ১১৪ জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বদলি ছাড়াও শাস্তির মধ্যে রয়েছে তিরস্কার, স্ট্যান্ড রিলিজ এমনকি সাময়িক বরখাস্তের মতো ঘটনাও।  বাকি অভিযোগগুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে যা প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই সাধারণ মানুষের কাছে বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করতে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেন । এসব উদ্যোগের অন্যতম তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে রেঞ্জের আওতাধীন ১৩ জেলার ৯৬ থানায় ৩টি করে কেøাজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন। ২০২০ সালের ২রা ডিসেম্বর থেকে থানাগুলোতে চলছে মনিটরিং। এতে পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়ছে।
ডিআইজি হাবিবুর রহমান বাসসকে বলেন, থানায় আসা ভুক্তভোগী সেবাপ্রত্যাশীদের সাধারণ ডাইরী, মামলা কিংবা অভিযোগ অনুযায়ী কাঙ্খিত সেবাগুলো নিশ্চিত করতেই ঢাকা রেঞ্জ পুলিশের পক্ষ থেকে এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

আপনি কি মনে করেন?

0 টি পয়েন্ট
উপনোট ডাউনভোট

একটি মন্তব্য

মইনুদ্দীন মন্ডলের সুস্থতা কামনায় দুস্থ মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করলেন এরফান আলী

ভারতে করোনায় নতুন করে আক্রান্ত ৫৪ হাজার ৬৯ জন