ভিতরে

নারী উদ্যোক্তা নাঈমার শাড়ি এখন বিদেশেও যাচ্ছে

ছবিঃ প্রতীকী

নাঈমা সুলতানা ছিলেন একজন সাধারণ গৃহিণী। এখন তার কোটি টাকার ব্যবসা। মানুষ যে তার স্বপ্নের সমান বড় তা বাস্তবে দেখিয়েছেন নাঈমা। আগে সাধারণ পাঁচটা গৃহবধূ হয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেও এখন তিনি আয় করেন। পরিবারের বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণেও থাকে তার অবদান। নিজের বুদ্ধি, ধৈর্য ও সৃজনশীল চিন্তার কারণে সফল নারী হয়ে ওঠেছেন তিনি। তার দেখাদেখি আরও অনেকেই ছোট-ছোট উদ্যোগ নিয়েছেন এবং অনেকে স্বাবলম্বীও হয়েছেন। এক্ষেত্রে নারীদের সফল ‘আইকন’ তিনি।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নারী উদ্যোক্তা নাঈমা সুলতানা জানালেন তার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প। আলাপ-চারিতায় উঠে এসেছে তার কাপড়ের ব্যবসা শুরু থেকে সাফল্যের দিনগুলোর কথা। বলেছেন নানা বাধা এবং তা কিভাবে মোকাবেলা করেছেন তাও।
ব্যবসা শুরুর কথা উল্লেখ করে নাঈমা বলেন, খুবই অল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করেছিলাম ব্যবসা। এখন বছরে প্রায় এক কোটি টাকার ব্যবসা করি। প্রথমে ঘরে বসেই টাঙ্গাইলের শাড়ি নিয়ে অনলাইনে ব্যবসাটা শুরু করি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
আলাপে ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের বাধার মুখে পড়ার কথাও বলেন নাঈমা। তার মতে, আসলে যাই করেন আপনি, শুরু করা কিন্তু সোজা নয়। পরিবার থেকে অনুমতি ছিল চাকরির। কিন্তু মনে ও মাথায় সব সময় ব্যবসা ঘুরতো। ‘পরিবারের লোকজন চাইতো না আমি ব্যবস্যা করি। অনেকভাবেই তাদের বুঝিয়েছি, কিন্তু আমি ব্যর্থ হই। অবশেষে কিছুটা গোপনে ফেসবুকের একটি পেজের মাধ্যমে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করি।’
নাঈমা বলেন, আমার এক বান্ধবীর বাসা ছিলো টাঙ্গাইলে। সে প্রায়ই তাঁতের শাড়ি নিয়ে আসতো। কারণ তার বাবার শাড়ির ব্যবসা ছিল। সেখান থেকে ১০টা শাড়ি নিয়েই শুরু করি ব্যবসা। ‘এগুলো দুইদিনেই বিক্রি হয়ে যায়। এরপর আমার আগ্রহ তখন আরও বেড়ে যায়। খুবই ইন্সপায়ার্ড হই। নতুন উদ্যোমে শুরু করি আবার। তখনও সাড়া পেলাম বেশ।’
তিনি বলেন, ‘আমার ব্যবসা তখন প্রাথমিকভাবে ভালোই চলছে। এর মাঝে সামনে ছিল বসন্ত উৎসব। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে অনলাইনে ১৫০টি শাড়ি বিক্রি করে ফেলি। সেই টাকা তুলে বাড়িতে জানাই বিষয়টি। এত টাকা এক সঙ্গে দেখে কেউ ভাবতেই পারেনি, আমার দ্বারা এটা সম্ভব।’
‘মোটামুটি সবাই সারপ্রাইজড। এবার সিদ্ধান্ত নিই আর চুপিচুপি নয়। তখন আর কোনো বিষয়ে না করেনি কেউ। তখন বাড়িতে বসেই শুরু হলো ব্যবসা, তবে একটু বড় পরিসরে,’ বলেন সংগ্রামী এই নারী।
প্রথমে অনলাইনেই চলতে থাকে নাঈমার শাড়ির ব্যবসা। পরবর্তীতে শোরুমও খুলেছেন তিনি। এখন অনলাইনে এবং অফলাইনে সমান তালে এগিয়ে চলেছে তার ব্যবসা। এর মাঝে দেশের বাজার পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন বাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে তার শাড়ির কদর!
বিদেশের মার্কেট ধরলেন কীভাবে? উত্তরে নাঈমা বললেন, আমার এক বান্ধবী স্বামীসহ কানাডায় থাকেন। ফেসবুকে আমি শাড়িগুলো তাকেও শেয়ার করতাম। মাঝে-মাঝে তিনি লাইক কমেন্ট করতেন।
‘২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে কানাডায় বাংলা কমিউনিটিতে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তখনই সিদ্ধান্ত হয় যে, মেয়েরা একই ধরনের শাড়ি পরবেন। ওই সময়ই আমার বন্ধু আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমার পেজে একটি শাড়ি শেয়ার করলে সেখানকার অনেকেই তা পছন্দ করেন। পরে তারা অনলাইনে অর্ডার করেন এবং টাকা পাঠিয়ে দেন। এরপর শাড়ি পেয়ে খুশিও হন। এরপর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অডার পাচ্ছি, শাড়িও পাঠাচ্ছি।’
বিদেশের মার্কেট ধরতে কোনো চ্যলেঞ্জ কী? এমন প্রশ্নের উত্তরে নারী উদ্যোক্তা নাঈমা বলেন, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পণ্যের ডেলিভারি। কারণ দেশে খুব একটা সমস্যা হয় না। কিন্তু বিদেশে পণ্য পৌঁছে দিতে বড় বড় কুরিয়ারের কাছে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে দেখা যায়, যে দামে শাড়ি কেনা হয় কুরিয়ার চার্জ কয়েকগুণ বেশি হয়। তবে এখন কিছু কোম্পানি রয়েছে যারা কম দামে ভালো সার্ভিস দেয়।
অনলাইনে বিদেশে পণ্য বিক্রির প্রসারের বিষয়ে নতুনদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিদেশে পণ্য বিক্রির সুবিধা হচ্ছে দাম বেশি পাওয়া যায়। দেশে আমি যেটা সেল করি ২০০০ টাকা সেটাই বাহিরে করা যায় ২৫০০ টাকায়। আবার কুরিয়ার চার্জও ক্রেতাই দেন।
‘তাই বিদেশে বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় মার্কেটিং করলে সেল ভালো পাওয়া যাবে। দেখা যায় যেখানে বাঙালি আছে সেখানে একজন নিলে বাকিরা এমনিই নিয়ে নেয়। অবশ্য সে দেশের মার্কেট থেকে কম দামেই পণ্য কিনতে পারেন অনলাইনে,’ যোগ করেন নাঈমা।

আপনি কি মনে করেন?

0 টি পয়েন্ট
উপনোট ডাউনভোট

একটি মন্তব্য

পাহাড়ী ঢালুতে লিচু চাষে সফল কাপ্তাইয়ের কৃষক এনামুল

জীবন সংগ্রামে জয়ী স্বাবলম্বী নারী সুমনার গল্প