ভিতরে

ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় নিউজিল্যান্ডের মাটিতে হার দিয়ে শুরু বাংলাদেশের

নিউজিল্যান্ড বোলারদের সুইং, সিম মুভমেন্ট ও বাউন্সে কুপোকাত হয়ে নিজেদের অসহায়ত্ব দেখালো বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। এতে চিত্র দাঁড়ালো ৪১ দশমিক ৫ ওভার ব্যাট করে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ১৩১ রানেই অলআউট সফরকারী বাংলাদেশ। ১৩২ রানের টার্গেট স্পর্শ করতে ২১ দশমিক ২ ওভার লেগেছে স্বাগতিকদের। ১৭২ বল বাকী রেখে ৮ উইকেটের জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল নিউজিল্যান্ড।
নিউজিল্যান্ড সফরে যাবার পর বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ই বলেছিলেন, ব্যাটিংএ প্রথম ১০-১৫ ওভার ঠিক-ঠাক কাটিয়ে দিতে পারলে এই কন্ডিশনে লড়াই করাটা কঠিন হবে না। মুখে যা বলেছিলেন, সেটি বাস্তবে করে দেখানোর চ্যালেঞ্জটা প্রথম ওয়ানডের শুরুতেই পেয়ে গিয়েছিলো বাংলাদেশ। ডুনেডিনের ইউনিভার্সিটি ওভালে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করার সুযোগ পায় বাংলাদেশ।
পেস-বান্ধব পিচে লিটন দাসকে নিয়ে ইনিংস শুরু করেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। প্রথম ওভারে স্বাভাবিকভাবে আক্রমনে নিউজিল্যান্ডের পেসার ট্রেন্ট বোল্ট। প্রথম দু’বলে রান দেননি বোল্ট। তৃতীয় ডেলিভারিতে পয়েন্টের উপর দিয়ে দারুন এক শটে ছক্কা হাকান তামিম। ওভার বাউন্ডারি দিয়ে রানের খাতা খুলে বাংলাদেশ।
পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে নিউজিল্যান্ডের আরেক পেসার ম্যাট হেনরিকে স্কয়ার লেগ দিয়ে বাউন্ডারি তামিমের। তাই বাংলাদেশের শুরুটা আক্রমনাত্মক মুডেই হয়েছিলো। তবে ঐ অবস্থা থেকে কিছুটা শান্ত হয়ে ৪ ওভার শেষে স্কোর বোর্ডে ১৯ রান তুলেন তামিম-লিটন। যেখানে তামিমের অবদান ১৪ বলে ১৩ রান। আর ঐ আনলাকি থার্টিনেই থেমে যান টাইগার দলপতি।
পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে বোল্টের সুইং সামলাতে না পেরে লেগ বিফোর হন তামিম। রিভিউ নেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি, তাই অন-ফিল্ড আম্পায়ারের সিদ্বান্তের পরই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তামিম।
তামিমকে তুলে নেয়ার পর বাংলাদেশের কাটা গায়ে নুনের ছিটা দেন বোল্ট। ঐ ওভারের চতুর্থ বলে সৌম্য সরকারকে শিকার করেন তিনি। কভারে ডেভন কনওয়েকে ক্যাচ দেন সৌম্য রানের খাতা খোলার আগেই। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ‘শুন্য’ সৌম্যর।
দলীয় ১৯ রানে তামিম-সৌম্যর বিদায়ে, চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সেই চাপ বাড়তে পারতো, ষষ্ঠ ওভারে হেনরির প্রথম বলে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়া লিটন। জীবন পেয়ে সর্তকতা অবলম্বন করেন লিটন। সর্তক থাকেন চার নম্বরে নামা মুশফিকুর রহিমও। তাই ১০ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর ২ উইকেটে ৩৩ রান।
সর্তক থেকে উইকেটে সেট হবার চেষ্টা করেছেন লিটন-মুশফিক। তার আগেই এই জুটিতে ভাঙ্গন ধরান ১৪তম ওভারে প্রথমবারের মত বল করতে আসা জেমস নিশাম। ৩৬ বলে ১৯ রান করা লিটনের বিদায় নিশ্চিত করেন পেসার নিশাম। এতে দেখা গেল প্রথম ১৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের তিন ব্যাটসম্যান প্যাভিলিয়নে। অর্থাৎ ইনিংসের প্রথম ১৫ ওভার স্বস্তিতে পার করতে পারলো না বাংলাদেশ।
বড় করে নিঃশ্বাস নেয়ার সুযোগ আর পায়নি বাংলাদেশ। নিশাম-হেনরি ও স্পিনার মিচেল স্যান্টনারের আক্রমনে বাংলাদেশের মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যানরাও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।
দলীয় ৬৯ রানে থামেন ধীরলয়ে খেলা মুশফিক। ৪৯ বলে ২টি চারে ২৩ রান করেন তিনি। নিশামের দ্বিতীয় শিকার হন তিনি। ৯ রান করে রান আউট হয়েছেন মোহাম্মদ মিঠুন। ১ রান করে স্পিনার স্যান্টনারের বলে বোল্ড হন মেহেদি হাসান মিরাজ। ৮ ওভারের মধ্যে ৭৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় পড়ে যায় বাংলাদেশ।
তারপরও সম্মানজনক স্কোর পাবার আশায় ছিলো টাইগাররা। কারন তখনও উইকেটে ছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তার সাথে যোগ দেন দ্রুত রান তোলায় পারদর্শী মাহেদি হাসান। নিজের অভিষেক ম্যাচে মুখোমুখি হওয়া দ্বিতীয় বলেই লং-অফ দিয়ে বিশাল ছক্কা মারেন মাহেদি। বোলার ছিলেন স্যান্টনার। পরবর্তীতে বোল্টকে একটি চারও মেরেছিলেন মাহেদি।
শুরুটা ভালো হলেও, ১৪ রানেই থামতে হয় মাহেদিকে। তার শিকারী স্যান্টনার। দলীয় ৯৮ রানে অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে মাহেদির বিদায়ে, ক্রিজে মাহমুদুল্লাহর সঙ্গী হন পেসার তাসকিন আহমেদ। দলকে সম্মানজনক স্কোর এনে দিতে দেখেশুনে খেলতে থাকেন তাসকিন। ধীরলয়ে দলকে রান এনে দেয়ার চেষ্টা করেছেন মাহমুদুল্লাহ। কিন্তু ৪১তম ওভারের প্রথম বলে মাহমুদুল্লাহকে ২৭ রানে থামিয়ে দেন হেনরি। ১টি করে চার-ছক্কায় ৫৪ বলে নিজের ইনিংসটি সাজান তিনি। অষ্টম উইকেটে তাসকিনের সাথে ২৭ রান যোগ করেন মাহমুদুল্লাহ। চতুর্থ উইকেটে মুশফিক-মিঠুনও ২৭ রান যোগ করেছিলেন। তাই এই ২৭ রানই বাংলাদেশের ইনিংসের সর্বোচ্চ রানের জুটি।
মাহমুদুুল্লাহ ফিরে যাবার ১০ বলের মধ্যে বাংলাদেশের ইনিংসের ইতি টানেন নিউজিল্যান্ডের বোল্ট। তাসকিনকে ১০ ও হাসানকে ১ রানে শিকার করেন তিনি। ৮ দশমিক ৫ ওভার বল করে ২৭ রানে ৪ উইকেট নেন বোল্ট। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন নিশাম-স্যান্টনার। ১ উইকেটে পকেটে ছিলো হেনরির। ১৩১ রান নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বনি¤œ স্কোর।
জয়ের জন্য ১৩২ রানের টার্গেটে টি-টুয়েন্টি মেজাজে ব্যাটিং শুরু করেন নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল ও হেনরি নিকোলস। প্রথম ৫ ওভারেই ৫২ রান তোলে নেন তারা। এরমধ্যে ১৭ বলে ৩৮ রান ছিলো গাপটিলের। বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে ইনিংস শুরু করা দুই পেসার মুস্তাফিজুর রহমানকে ২টি ছক্কা ও ১টি চার এবং হাসান মাহমুদকে ২টি করে চার ও ছক্কা মারেন গাপটিল।
ষষ্ঠ ওভারে বোলিং আক্রমনে পরিবর্তন আনেন বাংলাদেশের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। আক্রমনে এসেই বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন পেসার তাসকিন আহমেদ। গাপটিলকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন তাসকিন।
শুরুটা উড়ন্ত হওয়ার পর দ্বিতীয় উইকেটে দেখেশুনে খেলে নিউজিল্যান্ডকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে ৯০ বলে ৬৫ রানের জুটি গড়েন নিকোলস ও তিন নম্বরে নামা কনওয়ে। ইনিংসের ২০ ও নিজের চতুর্থ ওভারে নিকোলস-কনওয়ে জুটি ভাঙ্গেন হাসান। ২টি চারে ৫২ বলে ২৭ রান করেন কনওয়ে। তবে উইল ইয়ংকে নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন নিকোলস। ৫৩ বলে ৬টি চারে ৪৯ রানে অপরাজিত থাকেন নিকোলস। ১১ রানে অপরাজিত ছিলেন ইয়ং। বাংলাদেশের তাসকিন ২৩ রানে ও হাসান ৪৯ রানে ১টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন নিউজিল্যান্ডের বোল্ট।
বিশ্বকাপ সুপার লিগে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই জয় দিয়ে ১০ পয়েন্ট অর্জন করলো নিউজিল্যান্ড। আর নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে প্রথম হারের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। এর আগে দেশের মাটিতে সিরিজের তিন ম্যাচেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিলো টাইগাররা।
আগামী ২৩ মার্চ ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে।
স্কোর কার্ড (টস-নিউজিল্যান্ড) :
বাংলাদেশ ইনিংস :
তামিম ইকবাল এলবিডব্লু ব বোল্ট ১৩
লিটন দাস ক বোল্ট ব নিশাম ১৯
সৌম্য সরকার ক কনওয়ে ব বোল্ট ০
মুশফিকুর রহিম ক গাপটিল ব নিশাম ২৩
মোহাম্মদ মিঠুন রান আউট (নিশাম) ৯
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ক স্যান্টনার ব হেনরি ২৭
মেহেদি হাসান মিরাজ বোল্ড ব স্যান্টনার ১
মাহেদি হাসান ক নিকোলস ব স্যান্টনার ১৪
তাসকিন আহমেদ ক স্যান্টনার ব বোল্ট ১০
হাসান মাহমুদ বোল্ড ব বোল্ট ১
মুস্তাফিজুর রহমান অপরাজিত ১
অতিরিক্ত (লে বা-৩, নো-১, ও-৯) ১৩
মোট (৪১.৫ ওভার, অলআউট) ১৩১
উইকেট পতন : ১/১৯ (তামিম), ২/১৯ (সৌম্য), ৩/৪২ (লিটন), ৪/৬৯ (মুশফিক), ৫/৭২ (মিঠুন), ৬/৭৮ (মিরাজ), ৭/৯৮ (মাহেদি), ৮/১২৫ (মাহমুদুল্লাহ), ৯/১৩০ (হাসান), ১০/১৩১ (তাসকিন)।
নিউজিল্যান্ড বোলিং :
বোল্ট : ৮.৫-০-২৭-৪ (ও-৪),
হেনরি : ৯-১-২৬-১,
জেমিসন : ৮-১-২৫-০ (ও-১),
নিশাম : ৮-১-২৭-২ (ও-২, নো-১),
স্যান্টনার : ৮-০-২৩-২ (ও-২)।
নিউজিল্যান্ড ইনিংস :
মার্টিন গাপটিল ক মুশফিক ব তাসকিন ৩৮
হেনরি নিকোলস অপরাজিত ৪৯
ডেভন কনওয়ে ক মাহমুদুল্লাহ ব হাসান ২৭
উইল ইয়ং অপরাজিত ১১
অতিরিক্ত (বা-১, লে বা-২, নো-২, ও-২) ৭
মোট (২১.২ ওভার, ২ উইকেট) ১৩২
উইকেট পতন : ১/৫৪ (গাপটিল), ২/১১৯ (কনওয়ে)।
নিউজিল্যান্ড বোলিং :
মুস্তাফিজুর রহমান : ৪-০-২৬-০ (ও-১),
হাসান মাহমুদ : ৪.২-০-৪৯-১,
তাসকিন আহমেদ : ৪-০-২৩-১ (ও-১, নো-২),
মাহেদি হাসান : ৬-০-১৭-০,
মেহেদি হাসান মিরাজ : ২-০-৯-০,
সৌম্য সরকার : ১-০-৫-০।
ফল : নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : ট্রেন্ট বোল্ট (নিউজিল্যান্ড)।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল নিউজিল্যান্ড।

আপনি কি মনে করেন?

0 টি পয়েন্ট
উপনোট ডাউনভোট

একটি মন্তব্য

দেশজুড়ে বাড়ছে সূর্যমুখীর আবাদ : চলতি মৌসুমে সূর্যমুখী চাষের অভিষেক হলো নাটোরে

ব্যাটিং পারফরমেন্সে হতাশ তামিম